ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রোগ নিরাময়ে ৭ ভেষজ তেল

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৫
রোগ নিরাময়ে ৭ ভেষজ তেল

ঢাকা: রোগ নিরাময়ে অতি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে উদ্ভিজ্জ তেল। উদ্ভিজ্জ তেল বলতে বিভিন্ন ফল, পাতা, শস্যদানা ও ফুল থেকে তৈরি তেলকেই বোঝানো হয়।



শরীরের সুস্থতায় এসব তেল ম্যাসাজ ও সেবনের নিয়ম ভারতীয় উপমহাদেশে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বেশ প্রসিদ্ধ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা আছে, যে এলাকায় যেসব গাছ-গাছালি, ফলমূল, শস্য ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান জন্মে, সেসব এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ওইসব উপাদানই খুব উপযোগী।

এবারের আয়োজনে আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ কিছু ভেষজ তেলের গুণাগুণ সম্পর্কে জানবো। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক, ভেষজ গুণাগুণ সমৃদ্ধ এসব তেল স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপযোগী ।

অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েলের গুণাগুণ কমবেশি আমরা সবাই জানি। এটি আর্থাইটিস, স্ট্রোক, মাথা ব্যথা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরল কমায় ও হৃদরোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় অলিভ অয়েল স্তন, জরায়ু ও অন্যান্য ক্যান্সার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।    এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের প্রতিষেধক ও গলব্লাডারে পাথর জমতে দেয় না। অলিভ অয়েল ব্যাককটেরিয়া পিউরিফায়ার হিসেবেও কাজ করে। ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল অতি প্রসিদ্ধ একটি উপাদান। এটি ত্বকের ট্যানিন ও স্ট্রেচ মার্ক দূর করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হওয়ায় এটি যেকোনো চর্মরোগ ও সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এছাড়া অলিভ অয়েল ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু, সর্দি, হেপাটাইটিস বি প্রতিষেধকের কাজ করে। একইসঙ্গে কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে ও হজমে সহায়তা করে। এর মধ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড কোলেস্টেরল কমায় ও এসিডিটি হ্রাসে সহায়তা করে।

আমন্ড অয়েল

আমন্ড প্রোটিনের ভালো উৎস। এতে আরও রয়েছে খনিজ পদার্থ, উচ্চমানের প্রোটিন, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, ফাইটোক্যামিকেলস ও ফাইবার।   এটি ত্বকের জ্বালাপোড়া, শুষ্কতা ও চুলকানি রোধ করে। ভিটামিন ই এর ভালো উৎস হওয়ায় ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে উচ্চমানের ফলিক এসিড যা হৃদরোগ প্রতিরোধক। পটাশিয়াম ও সোডিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় আমন্ড অয়েল রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমন্ড অয়েল হজমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। শরীরের যেকোনো সংক্রমক রোগ প্রতিরোধ করে। স্মৃতিশক্তি ও স্নায়ুতন্ত্রের শক্তি বাড়ায়। এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের ভালো উৎস। অলিভ অয়েল ম্যাসাজের ফলে শরীরের রক্ত সনঞ্চালন বাড়ে। শিশুদের হাড় গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি বেদনানাশক হওয়ায় স্ট্রেস কমায় ও পেশির ব্যথা নাশ করে। নখের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও ভঙ্গুরতা রোধ করে।

সরষের তেল

সরষের তেলে রয়েছে অয়েলিক ও লিনোলিক এসিড যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি শরীরকে চাঙা করে তোলে ও ত্বকের দীপ্তি বাড়ায়। এটি হজমে সহায়তা করে ও মলত্যাগ স্বাভাবিক রাখে। সরষের তেল ক্ষুধা বাড়ায়। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান যা পাকস্থলিকে সক্রিয় রাখে ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হওয়ায় এটি ত্বককে চর্মরোগ হওয়া থেকে বাঁচায়। এটি চুলপড়া কমায় ও চুলের গোড়া মজবুত করে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ঠাণ্ডা প্রতিরোধক হওয়ায় এটি শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে। সরষের তেল শরীরের অতিরিক্ত লবণ, পানি ও টক্সিন দূর করে টনিকের কাজ করে। জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরের অন্যান্য ব্যথা কমায়। এতে রয়েছে ওমেগা-৩, ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই। উপাদানগুলো নিজ নিজ জায়গায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

তিলের তেল

স্বাস্থ্য রক্ষায় তিলের তেল চমৎকার কাজ করে। ঔষধি গুণাগুণ থাকায় এটি দীর্ঘ পাঁচ হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ত্বক, দাঁত ও হাড়ের পুনর্গঠনে সহায়তা করে। তিলের তেলে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ফাইবার, থায়ামিন, ফসফরাস ও প্রোটিন। জিংক সমৃদ্ধ হওয়ায় তিলের তেল ত্বকের কমনীয়তা ধরে রাখে। দাঁতকে সাদা করে। মুখের ব্যাক্টেরিয়া রোধ করে। এটি রক্তচাপ ও গ্লুকোজ কমায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ডিএনএ ক্ষয় রোধ করে। অস্টিওপরোসিস রোধ করে ও হাড় ক্ষয় কমায়। শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখে তিলের তেল।

নারকেল তেল

নারকেল তেলের ভেষজ গুণাগুণ অনেক। নারকেলে তেল চুলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ হলেও স্বাস্থ্যরক্ষায়ও এর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আলজেইমারস ও থাইরয়েড সমস্যার ভালো ওষুধ। এতে রয়েছে উচ্চ ক্যালরি। এটি ওজন ও কোলেস্টেরল কমায়। নারকেল তেল ত্বকের ভালো ময়েশ্চারাইজার।

কালিজিরা তেল

কালিজিরার তেল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাক্টোরিয়াল সমৃদ্ধ। প্রদাহ নিরাময়সহ সংক্রামণ প্রতিরোধক ও ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখে তেলটি। এছাড়াও মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা, ঠাণ্ডা ও ফ্লু সারায়। হজমে সাহায্য করে ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে। কালিজিরা তেল অ্যালার্জি কমায় ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ল্যাভেন্ডার অয়েল

ল্যাভেন্ডার ফুল থেকে তৈরি ল্যাভেন্ডার তেল প্রাকৃতিক সানব্যানের কাজ করে। অর্থাৎ সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে জ্বলে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়াও ল্যাভেন্ডার তেল গায়ে মাখলে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।