ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দহগ্রাম থেকে

এখানে হাসপাতালই অসুস্থ!

ইসমাইল হোসেন, ঊর্মি মাহবুব ও খোরশেদ আলম সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
এখানে হাসপাতালই অসুস্থ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দহগ্রাম থেকে: স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য নির্মিত দহগ্রামের ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিই যেনো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাজার বিশেক মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য গড়া হাসপাতালটিকে নিয়ে মোহাম্মদ মাহাবুবের অভিমত এমনই।

 

দহগ্রাম আঙ্গুরপোতার মিস্ত্রিপাড়ার মোহাম্মদ মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রী এলে ডাক্তার আসেন। আবার মন্ত্রী গেলে ডাক্তাররা চলে যান। ভিআইপিরা যখন ভিজিটে (পরিদর্শন) আসেন তখনই আমরা হাসপাতালের বেড দেখতে পাই। অবশিষ্ট সময় তালাই দেয়া থাকে। হাসপাতালতো নিজেই অসুস্থ, আমাদের সেবা দেবে কী করে!

সরেজমিনে দহগ্রাম ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কিছু লোক আড্ডা দিচ্ছেন হাসপাতালের গেটে। আর গেটে ঝুলছে বিশাল এক তালা। হাসপাতালটিতে রয়েছে ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ১০টি শয্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন।

স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালটির ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার কথা। উদ্বোধনের পর দিন পনেরো বিষয়টি ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন ঘটতে থাকে স্বাস্থ্যসেবায়। অধিকাংশ সময়ই তালা ঝোলা শুরু হয় হাসপাতাল ফটকে। এখন এই হাসপতাল দিনে এক থেকে দুই ঘণ্ট‍া সেবা দিয়ে থাকে বলে জানান দহগ্রাম ইউনিয়ন এলাকারই বাসিন্দা সেলিনা বেগম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এই এলাকার কেউ অসুস্থ হলে পাটগ্রাম হাসপাতাল ছাড়া গতি নেই। কারণ দহগ্রামে যে হাসপাতাল আছে সেটা সারাদিন বন্ধই থাকে। ডাক্তার মাঝে মধ্যে আসে, আবার আসেও না। এই হাসপাতাল এলাকার মানুষের কোনো কাজেই আসে না।

অথচ হাসপাতালটির জন্য দুই  জন ডাক্তার, দুই জন আয়া, দুই জন ওয়ার্ড বয়,  একজন কুক, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এখনো দিব্যি বেতন ভাতা পেয়ে যাচ্ছেন।

ডা. পল্লল ও ডা. জিল্লুর রহমানের সার্বক্ষণিক হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে থাকার কথা থাকলেও তারা সরকারের সে নির্দেশনা মানছেন না। সরকারিভাবে হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরেই ছয়টি কোয়ার্টার করে দেয়ার পরও কেউ না থাকায় সেগুলোতে বাড়ছে আগাছার রাজত্ব।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছয়টি কোয়ার্টারের মধ্যে তিনটি কোয়ার্টার ব্যবহৃত হয়। একটিতে থাকেন আয়া মর্জিনা, একটিতে ওয়ার্ড বয় মিজানুর রহমান ও একটিতে ডা. জিল্লুর রহমান। তবে রোববার হাসপাতালটিতে গিয়ে ডা. জিল্লুর রহমানেরও দেখা মেলেনি। ডা. পল্লল সব সময় পাটগ্রামেই থাকেন।

ওয়ার্ড বয় মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জিল্লুর স্যার ছুটিতে আছেন। তাই আজ আসতে পারেননি।  

আয়া মোছাঃ মর্জিনা জানান. ডা. পল্লল সাধারণত পাটগ্রামেই থাকেন। তিনি এই হাসপাতালে কম আসেন।

তাছাড়া হাসপাতালটি দিনের দু’এক ঘণ্টা খোলা থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না বলে জানান প্রধানবাড়ি এলাকার শফিকুল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, হাসপাতাল তো এমনি সারাদিনই বন্ধ থাকে। কখনো যদি খোলা থাকে তখন কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য গেলে ঔষুধ প্রয়োজন হলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, নেই। আমরা এ পর্যন্ত কখনোই এই হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ পাইনি।

কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতালটি নির্মিত হলেও তার সুফল ভোগ করতে না পারায় আক্ষেপের সীমা নেই এলাকাবাসীর।

** ই-সেবায় মজেছে দহগ্রামবাসী, ডাকঘরে তাই তালা
** এক বেঞ্চে গাদাগাদি, কমনরুম বারান্দায়
** দিনে দু’বার সীমান্ত পাড়ি ....

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
ইউএম/এমআইএইচ/জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।