ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ভুলে যাওয়া মানেই কি আলজেইমার্স!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫
ভুলে যাওয়া মানেই কি আলজেইমার্স!

ঢাকা: বাইশ বছর বয়সী দীপু। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার।

সকাল থেকে রাত, পুরোটাই নিয়মমাফিক চলে তার। পরিপাটি জীবন নিয়ে তিনি ভালোই ছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তার মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিছুই মনে থাকে না তার।

আর ইদানিং এই ব্যাপারটা তিনি নিজেই বুঝতে পারছেন। ভুলে যাওয়ার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজও অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।

ওষুধ খেতেও ভুল হচ্ছে দীপুর। কখনও একই ওষুধ দু’বার খেয়ে ফেলছেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কোথায় রাখছেন, খেয়াল থাকছে না নিজেরই। সেদিনতো ভুলে অফিসে সেলফোন ফেলেই চলে এসেছিলেন। মাঝপথে মনে পড়তেই রক্ষা। কেউ কিছু বললেও সেটা ঠিকঠাক মনে থাকছে না। প্রায়ই ভুলে যাওয়ার কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিও সামলাতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত।

এটা কি তবে আলজেইমার্সের লক্ষণ? সামান্য ভুলে যাওয়া থেকেই কি শুরু হয় আলজেইমার্স বা স্মৃতিভ্রংশতা? দীপুর মতো পরিস্থিতিতে অনেকের মনেই এমন প্রশ্ন দেখা দেয়। আর সেসব প্রশ্ন নিয়েই এবারের আয়োজন।   

কেন আমরা ভুলে যাই
ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি। কারণ, প্রতিনিয়তই আমাদের মস্তিষ্কে নানা তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযুক্ত হচ্ছে। আর নতুন বিষয়গুলো সংযোজনের সঙ্গে সঙ্গেই স্বাভাবিকভাবে পুরনো কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ফিকে হয়ে যেতে শুরু করে। তাই সেসব মানুষ ভুলে যায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যদি প্রতিনিয়তই কেউ ভুলে যেতে থাকেন, তাহলে তা চিন্তার বিষয়।

ভুলে যাওয়া কি তবে শঙ্কাজনক
সামান্য ভুল যেমন- জিনিসের পাল্টাপাল্টি হওয়া, হঠাৎ কোনো কিছু খুঁজে না পাওয়া বা চুলায় খাবার গরম করতে দিয়ে নামাতে ভুলে যাওয়া সাধারণ ভুল। যদি আলজেইমার্সের কথাই বলি তাহলে বলা যায়, হঠাৎ করেই কারও আলজেইমার্স হয় না। মস্তিষ্কে দীর্ঘদিনের স্মৃতিভ্রংশতার প্রক্রিয়ার ফলাফল হলো আলজেইমার্স, যা ব্যক্তির নিজের তুলনায় পরিবার ও কাছের মানুষ বেশি বুঝতে পারে। তবে আপনি নিজে যদি বুঝতে পারেন যে, আপনার ভুলে যাওয়ার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে, তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

আলজেইমার্স কী
আলজেইমার্স হলো স্মৃতিভ্রংশতা, যার ফলে ব্যক্তি তার সাম্প্রতিক স্মৃতি, আদর্শজ্ঞান ও দক্ষতার স্থান থেকে ক্রমশ সরে আসেন, যা তার দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা ও মিনেসোটাভিত্তিক মেয়ো ক্লিনিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কে প্লেক (বিটা অ্যামিলয়েড নামে জমা হওয়া প্রোটিন) ও ট্যাঙ্গলস (টাও নামে এক প্রকার প্রোটিনের সঙ্গে পাকানো ফাইবার) জমা হলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায়। আর সেটাই আলজেইমার্সের কারণ।    আলজেইমার্স সিদ্ধান্তহীনতা, মুড ডিসঅর্ডার ও আচার-আচরণের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

আলজেইমার্স কি জিনগত
কিছু রোগ বংশগত। অনেকেরই ধারণা, বাবা-মা’র কারও আলজেইমার্স থাকলে ছেলেমেয়ের আলজেইমার্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আলজেইমার্স জিনগত কারণের চাইতে বয়সের কারণে বেশি হয়। সাধারণত পঁয়ষট্টি থেকে সত্তর বছর বয়সীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আলজেইমার্সের লক্ষ্মণ শুরু হয় কখন থেকে
বেশিরভাগ মানুষেরই পঁয়ষট্টি বছরের পর আলজেইমার্সের লক্ষণ দেখা দেয়। তবে মাত্র পাঁচ শতাংশ ব্যক্তির চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরে আলজেইমার্স ধরা পড়ে। এসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার অন্তত সতেরো বছর আগেই মস্তিষ্কের কোষের পরিবর্তন শুরু হয়।

আলজেইমার্স কি নিরাময়যোগ্য
যদিও আলজেইমার্সের স্থায়ী কোনো সমাধান নেই, তবুও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, সুষম আহার ও ব্যায়াম স্মৃতিভ্রংশতা দ্রুত বাড়ানোর হার কমিয়ে আনে।  

বাংলাদেশ সময়: ০২১৩ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৫
এসএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।