ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাড়ির পাশে কলকাতায় সাশ্রয়ী চিকিৎসা এ্যাপোলোতে

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৫
বাড়ির পাশে কলকাতায় সাশ্রয়ী চিকিৎসা এ্যাপোলোতে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা থেকে ফিরে: হৃদরোগের অপারেশন, কিডনি প্রতিস্থাপন, অস্ত্রোপচার, ক্যান্সারের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য অনেকেই পাড়ি জমান দূর দেশে।   অনেক সময় নাম না জানা জটিল রোগ নির্ণয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মনোরম পরিবেশ ও একটু উন্নত চিকিৎসা সেবার আশায়ও বিশ্বের সব নামিদামি হাসপাতালে ছুটে যান।



কিন্তু ঘরের কাছেই যদি পাওয়া যায় মনের মতো সেবা তাহলে আর দূর দেশে কেন? তাইতো কম সময়ে, কম খরচে, কম কষ্টে আধুনিক সব যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত হয়ে অত্যাধুনিক চিকি‍ৎসা পদ্ধতিতে রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে ভারতের এ্যাপোলো গ্লেনিগেলস হাসপাতাল।

এখানে অত্যাধুনিক চিকি‍ৎসা পদ্ধতির অংশ হিসেবে রোবটের মাধ্যমে কিডনি প্রতিস্থাপন ও ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগের সফল চিকিৎসা করা হচ্ছে।   আমেরিকার তৈরি এ রোবট দিয়ে কিডনি-ক্যান্সার রোগীদের অপারেশন করা হচ্ছে সফলভাবে। এতে সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে, রক্তক্ষরণ কম হচ্ছে, অপারেশন পরবর্তী ব্যথা কমছে, আর সেইসঙ্গে নিখুঁত হচ্ছে অপারেশন কার্যক্রম।

রোবটের মাধ্যমে চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অমিত ঘোষ বলেন, রোবটের মাধ্যমে দাতার পেট থেকে নলের মাধ্যমে ছিদ্র করে কিডনি বের কের গ্রহীতার পেটে প্রতিস্থাপন করা হয়।   রোবটের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করতে সময় লাগে কম, নিখুঁত এবং রক্তক্ষরণও কম হয়।   মনিটরের সাহায্যে পেটের ভেতরের অংশের সবকিছু স্পষ্ট ও বড় করে দেখার সুবাদে চিকিৎসকরা রোবটের মাধ্যমে দ্রুত অপারেশন করতে সক্ষম হন। এ পদ্ধতিতে খরচ সাধারণের তুলনায় কিছু বেশি পড়ে।  

তিনি বলেন, রোবটিক সার্জারির মাধ্যমে এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে ইউরোলজির অনেক জটিল ও স্পর্শকাতর অপারেশন।

এছাড়াও বুক না কেটে ছোট ছিদ্র করে ‘কী হোল’ সার্জারির মাধ্যমে করা হচ্ছে হৃদরোগের অপারেশন, সেলভিজিও দিয়ে রোগীর পেটের বিভিন্ন জটিল রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, পেটের ভেতরের জটিল রোগ জানা যাচ্ছে ছোট একটি ক্যাপসুলেই।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুসান মুখোপাধ্যায় জানান, এ্যাপোলো হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে কী হোল সার্জারির মাধ্যমে।   এতে বুকের এক পাশের সর্বোচ্চ ৩টি ব্লক মাত্র ৩ ঘণ্টার অপারেশনের মাধ্যমে সারানো হয় বুক না কেটেই।   নল ঢুকিয়ে ছোট ছিদ্র করে ক্যামেরায় দেখে দেখে এ অপারেশন করা হয়।   এতে খরচ পড়ে বুক কেটে অপারেশন করার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।   ১ লাখ ৮০ হাজার রুপি দিয়েই অপারেশন শেষে ৩ দিনের মধ্যে রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।   এ চিকিৎসার বড় সুবিধা হলো অপারেশনের পর বুকে বড় ধরনের কোন দাগই থাকে না।

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মহেষ গোয়েঙ্কা বলেন, একটি ক্যাপসুল খাইয়েই রোগীর পেটের ভেতরের পুরো পরিস্থিতি জানা যাবে সহজে।   ১০ বছর আগেও এ চিকিৎসা পদ্ধতির কথা ভাবা যেতো না।

কলকাতা ক্যানাল সার্কুলার রোডে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালটি বছরে ৫ লাখ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়।   ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালটি পরিচালনা করছে সাড়ে ৪ হাজার চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।   সেবা গ্রহীতা ১৫ ভাগ বিদেশি রোগীর মধ্যে ৯ ভাগই বাংলাদেশি।   এ বিপুল সংখ্যক সেবা গ্রহীতার কথা মাথায় রেখেই ভারতের পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল, ভুটানসহ এ অঞ্চলে এ ধরনের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেছে কলকাতা এ্যাপোলো।

ভারতীয় এ্যাপোলো গ্রুপের পূর্বাঞ্চলের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. রুপালী বসু বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।   হাসপাতাল নয়, আমরা একটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইনস্টিটিউট হিসেবেই এর রূপ দিতে চাই।   কম সময়ে কম খরচে রোগীদের বাড়ি পাঠানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।  

তিনি জানান, গত অর্থবছরে এ হাসপাতালটি লেনদেন করেছে ৫৫০ কোটি ভারতীয় রুপি। গত বছর হাসপাতালের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ শতাংশ।   সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুটের এ হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবার জন্য সাড়ে ৪ হাজার প্রোডাক্ট রয়েছে।

বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশি রোগীরা চিকিৎসাক্ষেত্রে যেন অগ্রাধিকার পায় সে ব্যাপারে খুবই আন্তরিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।   ঢাকা ও চট্টগ্রামের ইনফরমেশন সেন্টার থেকেই যেন রোগীরা রেজিস্ট্রেশন করে আসতে পারে সে বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

কলকাতার পাঁচতারকা হোটেল আইটিসি সোনার এ গত শনিবার ও রোববার চিকি‍ৎসকদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।   এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলী। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. সুজয় কর, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ ভট্টাচার্য্য, হাসপাতালের মেডিকেল উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু সরকার, হাসপাতালের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার দেবব্রত সেন।

বিভিন্ন জটিল রোগ ও অপারেশনের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সে সর্ম্পকে বিস্তারিত পাওয়াপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় সম্মেলনে।   এতে ভারতের প্রায় ৪০০ চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৫
আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।