ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাজে জিন মুছে দিন, ৬০ শতাংশ বাড়বে আয়ু!

বাংলানিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
বাজে জিন মুছে দিন, ৬০ শতাংশ বাড়বে আয়ু! ছবি: সংগৃহীত

বার্ধক্য ঠেকিয়ে/বিলম্বিত করে বেশিদিন বাঁচতে চান? কুচ পরোয়া নেহি। উপায় খুঁজে পেয়ে গেছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা বুঝতে পেরেছেন যতো নষ্টের গোড়া মানুষের জিন। এই জিনের কারণেই বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয় মানুষের। অতএব দেহ থেকে ক্ষতিকর জিন মুছে ফেলতে পারাটাই সমাধান। তাতে বার্ধক্য  ঠেকিয়ে রাখা হয়তো যাবে না, বিলম্বিত করা যাবে। অর্থাৎ আয়ু বাড়ানো যাবে। কতটা বাড়ানো যাবে? সেটা শুনলে মন ভালো হয়ে যাবে আপনার/আমার সবার। ক্ষতিকর জিন মুছে দিতে পারলে প্রতিটা মানুষের আয়ু বেড়ে যাবে কম করে হলেও ৬০ শতাংশ। পশ্চিমের একটা নামিদামি ইংরেজি পত্রিকা এ ব্যাপারে প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে: ‘Deleting genes could boost lifespan by 60 per cent, say scientists.’

পত্রিকাটি আরো জানিয়েছে, বিজ্ঞানীরা মানুষের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী ২০০টির বেশি ক্ষতিকর জিন শনাক্ত করেছেন। এই ‘দুষ্ট জিনগুলোকে’ দেহ থেকে সরিয়ে ফেলতে বা ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে পারলেই কেল্লা ফতে। আপনি  আর সহজে বুড়িয়ে যাবেন না। বাঁচবেন আজকের গড়পড়তা মানুষের চেয়ে অনেক দিন বেশি। মানে স্বাভাবিকের চেয়ে আয়ু বেড়ে যাবে কয়েক দশক। বংশগত নানা রোগব্যাধি থেকেও মিলবে রেহাই। এক কোষী ছত্রাকের জিনকে অকেজো বা নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে তারা দেখতে পেয়েছেন এতে করে এই ছত্রাকের জীবনকালের পরিসর বেড়ে গেছে বহুগুণ। হাতেকলমে চালানো তাদের এই পরীক্ষাটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে বড় এক অগ্রগতি। এই অগ্রগতির পরবর্তী ধাপের সাফল্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের অমর হবার পথে বড় আশাবাদের বীজ। পরীক্ষা চালিয়ে তারা যা দেখতে পেয়েছেন তার বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে: ‘...showing that small genetic tweaks can make organisms live 60 per cent longer.’’
 
Buck Institute for Research on Ageing and the University of Washington-এর একদল বিজ্ঞানী এই গবেষণায় মগ্ন ছিলেন টানা ১০টা বছর। অবশেষে তারা সফলতার মুখ দেখলেন। গবেষণার পর তারা এখন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, অপ-জিনই আসল কালপ্রিট। ওকে শায়েস্তা করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে দীর্ঘ জীবন লাভের এমনকি অমরতার বীজ-মন্ত্র!

তারা সর্বমোট ২২৮টি অপ-জিন চিহ্নিত করেছেন। এইগুলোকে অকেজো বা নিষ্ক্রিয় করে দিলে বা জীবদেহ থেকে সরিয়ে বা মুছে দিলে আয়ুর পরিধি বেড়ে যাবে অবিশ্বাস্যভাবে। এইসব অপ-জিনের অধিকাংশই থাকে মানুষ ও স্তন্যপায়ী প্রাণিদের দেহে।  

গবেষকদলের প্রধান ড. ব্রায়ান কেনেডি জানান, 'এই ক্ষতিকর ২২৮ জিনের অর্ধেকই  থাকে স্তন্যপায়ী প্রাণিদের শরীরে। '

এখন বিজ্ঞানীদের সামনে বড় কাজ হলো, চিহ্নিত এসব জিনের মধ্যে কোন কোনটি সহজে বশ মানে তা খুঁজে বের করা।
তাদের এই যুগান্তকারী গবেষণার  ফল প্রকাশিত হয়েছে সেল মেটাবলিজম ( Cell Metabolism.) নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে।
 
প্রতিবেদনে যা লেখা হয়েছে তা হুবহু তুলে দিচ্ছি: ‘Ten years of research by the Buck Institute for Research on Ageing and the University of Washington has identified 238 genes that, when silenced, increase the lifespan of yeast cells.’
 
 সেখানে ড. ব্রায়ান কেনেডির বক্তব্যের আরো একটি মূল্যবান উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, “এই গবেষণাটি জেনোমের পুরো পরিপ্রেক্ষিত থেকে মানুষের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে বিবেচনা করে থাকে। আর বুড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আসলে কি সে ব্যাপারেও এই গবেষণা আমাদের সামনে একটা সামগ্রিক চিত্র ফুটিয়ে তোলে। ''
  .
আর তারই দলের অপর এক সদস্য ড. মার্ক ম্যাক্‌করমিক এ প্রসঙ্গে যোগ করলেন: "আমাদের গবেষণার সর্বোত্তম ফলটাও আমরা পেয়েছি একটিমাত্র জিনকে এক কোষী ছত্রাকের দেহ থেকে সরিয়ে নিয়ে। আর তাতেই ওই ছত্রাকের আয়ু বেড়ে গেছে ৬০ শতাংশের বেশি। ’'

গবেষক দলটি বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোন কোন জিন আসলে দায়ী তা বের করার জন্য এককোষী ছত্রাকের দেহের অনুজীবকে পরীক্ষা করেন। এরপর প্রতিটি অনুজীব থেকে এর জিনকে বিযুক্ত করেন তারা। তারপর তারা লক্ষ্য করেন এই নাটকীয় আর আশাপ্রদ ফল : '‘They found that deleting a gene called LOS1 produced particularly impressive results, extending life by 60 per cent.’’

এই  LOS1 একটা জেনেটিক মাস্টার সুইচের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই মাস্টার সুইচটা আবার কম ক্যালরি গ্রহণের (‘ক্যালরির রেসট্রিকশন’)সঙ্গে সম্পর্কিত। আর এখানেই বর্ধিত আয়ুলাভের রহস্যটি লুকানো।

ড. ব্রায়ান কেনেডির ভাষায়: ‘‘ দীর্ঘদিন ধরেই মানুষ একথা জেনে এসেছে যে, কম ক্যালরি গ্রহণ করলে মানুষের আয়ু বেড়ে যায়। ’’

এর মানে মানুষ যে উপবাস করে তাতে ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি হয়। এ বছরের গোড়ার দিকে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষকও হাতেকলমে এর প্রমাণ পেয়েছিলেন। তারা দেখতে পেয়েছিলেন টানা ৫দিন কম খাবার গ্রহণ (যা উপবাসের সঙ্গে তুলনীয়) করে দেখা গেছে এতে করে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা (immune system) দারুণভাবে বেড়ে যায়, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো জীবনঘাতী রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিও কমে বহুগুণ। আর এতে করে বার্ধক্যের প্রক্রিয়াটাও গতিও হয় অনেক ধীর-মন্থর।

এই একই গবেষকদল গত বছরও আরেক পরীক্ষায় দেখতে পেয়েছিলেন উপবাস পুরো ইম্যিউন সিস্টেমকে পুনর্জীবিত ও চাঙ্গা করে তোলে। আর তাতে করে পাওয়া যায় বহুবিধ স্বাস্থ্য-সুবিধা: ‘...fasting can regenerate the entire immune system, bringing a host of long-term health benefits.’

‘চাই স্বাস্থ্য চাই বল
আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু’

---কবির এই বাণী একদিন সত্য হবে। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়। বিজ্ঞান মানুষের হাতে তুলে দিতে চলেছে সেই অমরতার চাবি। জয়তু বিজ্ঞানের!

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।