ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চাঁদপুর থেকে আইছেন, জরুরি বিভাগ চোখে পড়ে না?

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
চাঁদপুর থেকে আইছেন, জরুরি বিভাগ চোখে পড়ে না? ছবি: পিয়াস / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বুধবার রাত ২টা। চাঁদপুর থেকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে এসেছেন মা শায়লা খাতুন।

শীতের প্রকোপে তিন মাসের কোলের শিশু দুই দিন ধরে অসুস্থ। এর আগে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল শিশুটিকে। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় কোলের মানিককে মধ্যরাতে অ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকা শিশু হাসপাতালে এনেছেন তিনি।
 
শীতের প্রকোপে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই কাতারে পড়েছেন শায়লা খাতুনের শিশুও।
 
উন্নত চিকিৎসা ও ভালো ব্যবহারের আশায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে এসেছে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন মা শায়লা। শায়লার সঙ্গে এসেছেন বড় বোন শাহনাজ। কিন্তু হাসপাতালের গার্ড প্রধান ফটকে তাকে আটকে দেয়।
 
গার্ডদের উক্তি, উপরের কড়া নির্দেশ, রোগীর সঙ্গে একজন প্রবেশ করতে পারবেন। এর পরে কোলের শিশুর মুখে লাগানো একগুচ্ছ স্যালাইনের লাইন ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে 'রিসিপশন’ কক্ষের সামনে আসেন মা শায়লা।
 
রিসিপশন কক্ষে দায়িত্বরত ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০ টাকা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তির টিকিট সংগ্রহ করেন তিনি। এর পরে কক্ষে দায়িত্বরত ব্যক্তির কাছে মা জানতে চান জরুরি বিভাগটা কোন দিকে।
 
এর পরেই রিসিপশন কক্ষের ব্যক্তি রেগে মেগে উত্তর দেন ‘শিশু লইয়া চাঁদপুর থেকে আইছেন, এখন জরুরি বিভাগ চোখে পড়ে না?
 
কোলের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে জরুরি বিভাগে প্রবেশ করেন শায়লা। জরুরি বিভাগের প্রবেশ করতেই আবারও তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তিনি। জরুরি বিভাগে আরাম আয়েশ করে ডিউটি পালন করছিলেন একজন ডাক্তারসহ ‍নার্স এবং ওয়ার্ড বয়। অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে জরুরি বিভাগে প্রবেশ করে যেন অন্যায় করে ফেলেছেন মা শায়লা।
 
ডাক্তার শায়লাকে প্রশ্ন করেন, কোথা থেকে আসা হয়েছে? এর পরে মা শায়লার সরল উক্তি চাঁদপুর থেকে।
 
এর পরে নার্স বলতে থাকেন চাঁদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল ওয়ালাদের জন্য আলাদা হাসপাতাল করতে হবে। এই জেলাগুলোর অসুস্থ শিশু ভর্তি হয়ে হাসপাতাল ভরে গেছে। এদের জন্য আর পারি না।  
 
অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে মা শায়লা খাতুন কান্না করতে থাকলে নার্স ধমক দিয়ে বলেন, ওই বেটি, চুপ থাকো, কান্না করো না ? কান্না করলে কি রোগ সারবে?
 
ঢাকা শিশু হাসপাতাল শিশুদের চিকিৎসার জন্য নিয়োজিত ও শিশুস্বাস্থ্য রক্ষার যাবতীয় কর্মকাণ্ড সংবলিত দেশের প্রথম শিশু হাসপাতাল। অথচ  প্রতিনিয়তই ডাক্তার ও নার্সদের তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে রোগী ও তাদের অভিভাবকদের। কোমলমতি বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য কোমল মন থাকা চাই। এর ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের।
 
এই প্রসঙ্গে শায়লার বড় বোন শাহনাজ বাংলানিউজকে বলেন, ওদের ব্যবহার মোটেও ভালো না। আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে। অসুস্থ শিশুকে নিয়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে এসেছি কিন্তু কারো ভালো ব্যবহার পাচ্ছি না।
 
তিনি আরও বলেন, ঠাণ্ডার কারণে দুই দিন আগে বাচ্চা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুধও খায় না, মুখও নড়ায় না। জরুরি বিভাগে বাচ্চাকে ঠিকমতো নেবুলাইজারও দেয় না। ডাক্তার তো একরকম আছে, নার্সদের ব্যবহার আরও খারাপ।  
 
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসা খরচও বেশি। জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য ৬০ টাকা খরচ করে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া প্রতিদিন সাধারণ বেডের ভাড়া ৬০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য আইসিইউ খরচ প্রতিদিন সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজার টাকা।
 
হাসপাতালে দুই মাসের শিশু ভর্তি করিয়েছেন শহিদুল। তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের শহিদুল বাচ্চার চিকিৎসা খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
 
শহিদুল বাংলানিউজকে বলেন, তিন দিনেই সাধারণ বেডের ভাড়াসহ অন্যান্য খরচা গেছে দুই হাজার টাকা। এছাড়া ওষুধ ও অন্যান্য বাড়তি খরচ তো পড়ে আছে।
 
হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতের মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। বুধবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত কারণে ১২৫ শিশু ভর্তি হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
এমআইএস/এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।