ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মমেক হাসপাতালে জনবল নিয়োগ

‘টাকাও নাই, চাকরিও নাই’

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
‘টাকাও নাই, চাকরিও নাই’ ছবি- অনিক খান/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: প্রায় এক যুগ ধরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন হাজেরা খাতুন। পঞ্চাশের কোটায় বয়স তার।

হাসপাতালে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ৭৪ পদে বেসরকারিভাবে চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ হলেও এখানে চাকরি হয়নি হাজেরা খাতুনের।

কেন চাকরি হয়নি, প্রশ্ন করতেই ক্ষোভ নিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘গরিবের চাকরি হইতো না। আমগর টাকাও নাই, চাকরিও নাই’।

একই রকম অভিযোগ উচ্চারিত হলো আয়া হোসনে আরা বেগমের (৪৫) কন্ঠেও।

চাকরি না পাওয়ার কারণ জানিয়ে এ আয়া বলেন, ‘টেহা (টাকা) ছাড়া কারো চাকরি হয় নাই। ৫০ হাজার, ১ লাখ টেহা দিবার মতো ক্ষমতা আমার নাই। আমগর চাকরি হইবো কেমনে?’

শুধু হাজেরা, হোসনে আরা নয়, চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগে ফ্রি স্টাইলে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আয়া সাফিয়া, সেলিনাসহ আরো অনেকেরই। শনিবার (০৫ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেবার ও গাইনি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে তারা এমন অভিযোগ করেন।

আর তাদের অভিযোগের তীর হাসপাতালের ডক্টরস ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ক্যান্টিন পরিচালনাকারী রুমেলের দিকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল বরকত সিকিউরিটি লিমিটেড নামে উত্তরবঙ্গের একটি কোম্পানিকে।

আর ক্যান্টিন পরিচালনাকারী রুমেল এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবার এ নিয়োগ সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়েছিলেন। এ দায়িত্ব পেয়েই রুমেল সিন্ডিকেট আয়া, অফিস সহায়কসহ ৭৪ পদে জনবল নিয়োগে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এক বছর পর চাকরি সরকারিকরণ হবে এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ফ্রি-স্টাইলে এমন কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।

আর যারা টাকা দিতে পারেননি তারা চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। শনিবার সকালেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব জনবল নিয়োগ অনুমোদন করেছে- এমন দাবি সূত্রের।

চাকরিবঞ্চিতদের অভিযোগ, অস্থায়ী ভিত্তিতে এ চাকরিতে এক টাকা নেওয়ারও নিয়ম নেই। অথচ উত্তরবঙ্গের বরকত সিকিউরিটি লিমিটেড ও স্থানীয় রুমেল সিন্ডিকেট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে অবাধে প্রকাশ্যে এ দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশী অনেকেই আবার প্রতারণারও শিকার হয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহে বরকত সিকিউরিটি লিমিটেডের কোনো অফিস নেই। ভূইফোঁড় এ কোম্পানিটির এখানে কোনো অস্তিত্ব না থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

হাসপাতালের এক শ্রেণীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির সভাপতি আলী হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মেহেরুল ইসলামদের পকেটেও গেছে এ নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা- এমন অভিযোগ উঠছে হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে।

হাসপাতালে গার্ডের চাকরি করেন শফিকুল ইসলাম। ওই সিন্ডিকেটের হাঁকানো দরদাম মাফিক টাকা দিতে না পারায় তারও চাকরি হয়নি। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রথমত ইতস্তত বোধ করেন। পরে ক্ষোভ নিয়েই বলেন, ‘আমগর পরিশ্রমের মূল্য ওরা দেয় নাই। বাইরে থেকে টাকা নিয়া লোক নিয়োগ দিছে’।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আয়া পদে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন শনিবার সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন। অথচ আয়া হিসেবে কাজ করার জন্য তারা উপযুক্ত নন! এসব নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশিরভাগের হাতেই দেখা গেছে ভ্যানিটি ব্যাগ।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবুল আহসান তাদের হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ কেন, জানতে চাইলে তারা উত্তর দেন, ‘স্যার ভুল হয়েছে। আর নিয়ে আসবো না’। অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেই বাংলানিউজকে এমন তথ্য দেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ আমিও শুনেছি। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। সরাসরি কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।