ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডায়বেটিস-ক্যান্সার-হৃদরোগ-আলসার ঠেকাবে পাটের চা

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৬
ডায়বেটিস-ক্যান্সার-হৃদরোগ-আলসার ঠেকাবে পাটের চা ছবি: মোহাম্মদ সুমন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সৌন্দর্য ও প্রসাধন চর্চায় যার নাম গোটা দুনিয়ায়, লোককথায় প্রচলিত সেই রানী ক্লিওপেট্রা তার যৌবন ধরে রাখতে নিয়মিত পাট পাতার স্যুপ সেবন করতেন। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ সালে কোনো এক অসুস্থ মিশরীয় রাজাকে পাট পাতার স্যুপ খেতে দেওয়া হয়েছিলো, যা তাকে সবল করে তুলেছিলো, এমন কথাও প্রচলিত আছে।



সেই পাট পাতা থেকে এবার বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট তৈরি করেছে ‘মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’।
 
ডায়বেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও আলসার প্রতিরোধ, ডিএনএ ও লিভারের ক্ষয়রোধ, রক্তচাপ ও কোলেসটেরল নিয়ন্ত্রণ করার মত অলৌকিক সব গুণাবলি রয়েছে পাট পাতায় তৈরি এ চায়ে। অলৌকিক গুনাবলির কারণে এ চায়ের নামকরণ করা হয় ‘মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’।
 
অর্গানিক সার প্রয়োগে উৎপাদিত গাছ এবং বিশেষ প্রক্রিয়ায় সকল গুণাগুণ অক্ষুন্ন রেখে তৈরি করা হয় ‘মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’।
 
সম্প্রতি তৈরি করা এ চা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
 
রোববার (০৬ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ এর সফল বাস্তবায়ন উপলক্ষে সম্মাননা প্রদান এবং বহুমুখী পাটপণ্য মেলা উদ্বোধনকালে পাট পাতার তৈরি এ চায়ের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
পরে মেলা পরিদর্শনকালে তিনি পাট থেকে তৈরি চায়ের স্টলে আসেন। এ সময় তিনি এ চায়ে কিছুটা ফ্লেভার যুক্ত করার পরামর্শ দেন।
 
পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট কর্মকর্তাদের দাবি, মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টিতে যে পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি, ই ও অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইটোকেমিক্যাল আছে তা অনেক দামি ফলমূল বা সবজিতেও পাওয়া যায় না।
 
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’র ৮০.৪ থেকে ৮৪.১ শতাংশ জলীয়, ৪৩ থেকে ৫৮ ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৪.৫ থেকে ৫.৬ গ্রাম প্রোটিন, ১.৭ থেকে ২ গ্রাম ফাইবার, ৭.৬ থেকে ১২.৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট্‌স, ২.৪ অ্যাশ গ্রাম, ২৬৬ থেকে ৩৬৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯৭ থেকে ১২২ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১১.৬ মিলিগ্রাম লৌহ, ১২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৪৬৬ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৬,৩৯০ ইন্টারন্যাশনাল একক ভিটামিন এ, ১৫ মিলিগ্রাম থায়ামিন (ভিটামিন বি-১), ২৮ মিলিগ্রাম রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি-২), ১.৫ মিলিগ্রাম নিয়াসিন (ভিটামিন বি-৩), ৯৫ মিলিগ্রাম এসকরবিক এসিড, ২ গ্রাম ডায়াটরি ফাইবার, ১ গ্রাম সুগার, ০.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই, ১০৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে, ০.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-৬, ১০৪ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট, ০.১ মিলিগ্রাম প্যানটোথেনিক এসিড এবং ১২.৮ মিলিগ্রাম কোলিন।
 
এছাড়াও এতে অ্যালকালয়েড, ফ্ল্যাভোনোয়েড, ফেনল, আন্থ্রাকুইনোন, স্টেরয়েড্‌স, টারপিনোয়েডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।   
 
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সিটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেসদৌস আরা দিলরুবা বাংলানিউজকে বলেন, মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’র জৈব রাসায়নিক ও পুষ্টিমান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে যেসব উপাদান রয়েছে তা ক্যান্সার, হৃদরোগ ও আলসার প্রতিরোধ, ডিএনএ ও লিভারের ক্ষয়রোধ, রক্তচাপ ও কোলেসটেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
 
এসব রোগ প্রতিরোধ করার বিষয়ে কোনো ক্লিনিক্যাল প্রমাণ আছে কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি এটা তৈরি করা হয়েছে। এটা নিয়ে ক্লিনিক্যাল গবেষণার সুযোগ এখনো হয়নি। রাসায়নিক বিশ্লেষণে পাওয়া বিভিন্ন উপাদানের আনুপাতিক উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে রোগ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন উপকারিতার কথা বলছি।
 
পাট পাতায় তৈরি এ চা শিগগির বাজারজাত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগ্রহীরা এ প্রযুক্তি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে পাট পাতার চা বাজারজাত করতে পারে।
 
অন্যান্য চা তৈরির নিয়মেই পাট পাতার চা তৈরি করতে হয়। একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ কাপ মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি পান করতে পারবেন বলেও জানায় পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট।
 
বিভিন্ন দেশে রোগ নিরাময়, রোগ প্রতিরোধের জন্য পাট পাতার নির্যাস, স্যুপ ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে, এখনও হচ্ছে।
 
পাট পাতা এবং এ পাতায় তৈরি মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’র বিভিন্ন উপকারী দিক তুলে ধরে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট বলছে, মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টি’র মূল উপাদান পাট পাতা। এ পাট পাতা ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, ডায়াবেটিস রোগীর বার্ধক্যজনিত অন্ধত্বসহ অন্যান্য জটিল রোগের সম্ভবনা কমিয়ে দেয়।
 
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত পাট পাত পেটের পীড়া ও আলসার প্রতিরোধ করে। মিরাকল অর্গানিক গ্রিন টিতে থাকা প্রচুর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট মানব শরীরের দুর্বল কোষে ফ্রি রেডিক্যাল এর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে দেয় না ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এ চা নিয়মিত পানে কোলেসটেরল কমে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
 
মালয়েশিয়ার একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট বলছে, পাট পাতা রাসায়নিক বিষক্রিয়ার কারণে লিভার ড্যামেজ ও জন্ডিস প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
 
জাপানি মেয়েরা গায়ের রঙের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বাড়াতে পাট পাতা থেকে তৈরি ক্যাপস্যুল ব্যবহার করে বলেও জানায় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৬
এমইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।