ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মৌসুম পাল্টেছে এডিস! ডেঙ্গুর শঙ্কা বছরজুড়ে

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
মৌসুম পাল্টেছে এডিস! ডেঙ্গুর শঙ্কা বছরজুড়ে

ঢাকা: জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বর্ষার আগেই বৃষ্টিপাত বেড়ে গেছে। ফলে বসে নেই এডিস মশারাও।

এখানে ওখানে জমে থাকা পানিতে ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করে চলেছে। আর এতে মৌসুম না আসতেই বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব। এমনকি বর্ষার মওসুম শেষ হলেও দেখা যায় বৃষ্টিপাত। তাতেও এডিস সুযোগ নেয়। ফলে আগে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বর দেখা যেতো, যা এখন মৌসুম পাল্টিয়ে বছরের বিভিন্ন সময়ে দেখা দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়ের আগে বা পরে হওয়াতে মানুষ সচেতন হচ্ছে কম ফলে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
 
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার গত কয়েক বছরের প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায় আগষ্ট মাস থেকে আগে অথবা পরে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এখন সময়ের আগেই বর্ষা চলে এসেছে। বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে এডিস মশা বাড়বে।
 
তিনি বলেন, ২০০০ সালে যখন প্রথম এডিস মশার প্রাদুর্ভাব হয় তখন আগষ্ট মাসেই আক্রান্ত হতো বেশি। কিন্তু এখন বর্ষার সাথে সাথে এডিস মশাও মৌসুম পাল্টেছে।
 
রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সাল পর্যন্তও আগস্টেই বাড়তো এডিস মশা।   কিন্তু ২০১৫ সালে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। ওই মাসে তুলনামূলক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। জুলাই-আগষ্ট বর্ষাকাল হলেও এবছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ-এপ্রিলেও দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের ঘটনা।  

২০১৬ সালে ২২ মার্চের আগ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে ৭টি শহরে ৫ হাজার ১৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৬৪২ জনের মধ্যেই এডিস পজিটিভ পাওয়া যায়। ঢাকায় ৫ দিন এবং অন্যান্য শহরে ৩ দিন করে নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, এডিস মশার জীবানু রয়েছে।
 
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস সেন্টার থেকে পাওয়া রিপোর্টে দেখা যায়, ১ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ২৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এরা সকলেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
 
২০১৩ সাল থেকেই এ বর্ষার বদলে বর্ষা পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে এডিসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে। ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বর্ষা পূর্ব এডিসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ জন। তবে ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ১৯ জন এবং ২০১৪ সালে ২৪ জন ছিলো। আর ২০১৫ সালে তা অনেকটা ভয়াবহ রূপ নেয়। এই বছর বর্ষায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৩৭ জন আর বর্ষা পরবর্তী বা পূর্ববর্তী মৌসুমে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৮০ জন।
 
এডিস মশা মৌসুম পরিবর্তনের কারনেই ২০০৪ সালের পর ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। গত বছরে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৬২ জন। আবার ২০১৫ সালে জুলাই বা আগষ্টের তুলনায় নভেম্বরে ছিল সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। জুলাই মাসে ১৫৬ জন আক্রান্ত হয়ে ২ জন মারা যান। অন্যদিকে নভেম্বরে ৯৩৭ জন আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২ জন। এমনকি ডিসেম্বরের শীতেও ৭৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
 
অধ্যাপক শামসুজ্জামান বলেন, এটা স্পষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ডেঙ্গু্ জ্বরের এই সময় পরিবর্তন। এখন গ্রীষ্মের আগে বর্ষা চলে আসছে। শীতকালেও দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে আষাঢ় মাসে খড়া!
 
নিরীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে যেখানে আদ্রতা ছিল ৭৭ শতাংশ এবং বৃষ্টির পরিমান ছিল ৩০২ মিলিমিটার, ২০১৫ সালের ওই মাসে আদ্রতা বেড়ে ৮২ শতাংশ এবং বৃষ্টির পরিমান ৯২৮ মিলিমিটার।
 
এছাড়াও প্রতিবেশী দেশসমূহেও জুলাই-অাগষ্টের তুলনায় অন্য মাসে ডেঙ্গুর প্রবণতা বেশি। ভারতে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২৭ হাজার ৬৬৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০ জন। মায়ানমারে জুন মাসে ১০ হাজার ৯১৮ জন আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৪৫ জন।  
 
সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) এর ৪ টি দল দেশের ২৪ টি হাসপাতালকে পর্যবেক্ষণ করছে। ধারনা করা হচ্ছে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্যে একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠবে।
 
এডিশ মশার প্রতিরোধ হিসেবে অধ্যাপক শামসুজ্জামান বলেন, এখন বর্ষার পূর্বেই ডেঙ্গু সর্ম্পকে সচেতন হতে হবে। বাসায় ফুলের টব, ভাঙ্গা হাড়ি, গাড়ির টায়ার এধরনের যেসব স্থানে মশা জন্মায়, সেসব স্থানে পানি জমতে দেয়া যাবে না। বাড়ির আশপাশের আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে হবে। দিনে ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময় ১১১৫ ঘন্টা; এপ্রিল ০৭, ২০১৫
এমএন/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।