ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বৃষ্টিতেও আমরণ অনশনে মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
বৃষ্টিতেও আমরণ অনশনে মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীরা ছবি: বাংলানিউজটোেয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দুপুর আড়াইটা থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও ১০ দফা দাবি আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমটিপিএসএ) শিক্ষার্থীরা।

বৃষ্টির মধ্যেই আন্দোলনরত শত শত শিক্ষাথীকে স্লোগান দিতে দেখা গেছে, ‘ঝড় বৃষ্টি মানবো না, রাজপথ ছাড়বো না’।

মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত হাফসা ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম। জনগণের সঠিক রোগ নির্ণয়ে ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। অথচ আজ আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত’।

মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসির শেষ বর্ষের এই শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করান। কিন্তু পড়ালেখা করেও যখন মাসের পর মাস বেকার থাকতে হয়, তখন এই পড়ালেখা করে কি লাভ? আমরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না’।

তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে হাজার হাজার ভুয়া মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট তৈরি করে চলেছে। যাদের মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স পরিচালনা করার কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়া ভর্তি নীতিমালায় যেকোনো বয়সের ব্যক্তি যেকোনো বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। স্বাস্থ্যসেবার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে মানহীন, যোগ্যতাহীন, অদক্ষদের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে গড়ে তোলার ফলে রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় না। ফলে এক সময় ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী মারা যান। আর তখন সেই পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার’।

বিএমটিপিএসএ’র আহ্বায়ক মো. জসিম উদ্দিন জনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসিতে পড়ালেখার জন্য ৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়া, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঝিনাইদহে। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে ১০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইএইচটি অনুষদে প্রতি বছর ৫০ জন করে গড়ে ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হন।

তিনি আরো বলেন, সরকারি আইএইচটিগুলো থেকে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পাস করে বের হচ্ছেন। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে যে হারে শিক্ষার্থীরা বের হচ্ছেন, সে হারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে।

১৬ মে থেকে গত ৯ দিন ধরে বিএমটিপিএসএ’র শিক্ষাথীরা যে দাবিগুলোর জন্য আন্দোলন করছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পরিচালিত অবৈধ ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি কোর্স পরিচালনা বন্ধ, প্যারামেডিকেল শিক্ষাবোর্ডের  পরিবর্তে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড গঠন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি কোর্স পরিচালনা, সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের পদমযার্দা ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, বিএসসি ডেন্টাল কোর্সের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় ভর্তির কাযর্ক্রম চালু করা, স্বাস্থ্য অধিদফতরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের যোগাযোগের সুবিধার্থে স্বতন্ত্র উইং চালু, বিএসসি মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পদ সৃষ্টি, ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ক্যারিয়ার প্লান দ্রুত বাস্তবায়ন করে পদোন্নতি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ইন্টার্নশিপ ভাতা প্রদান, ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের বেকার সমস্যা দূরীকরণে ডাব্লিউএইচও’র নীতিমালা অনুযায়ী নতুন কমর্সংস্থান এবং সকল প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
এসজে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।