ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রোগী আছে, ডাক্তার নেই!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
রোগী আছে, ডাক্তার নেই! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তালা (সাতক্ষীরা): ঘড়ির কাটায় সকাল ৮টা ৫০ মিনিট। রোগী আছে, ডাক্তার নেই।

চিকিৎসকের রুমের সামনে বসে আছেন অনেকে। আর অসুস্থতার কারণে কেউ কেউ বসতে না পেরে শুয়ে আছেন বেঞ্চের ওপর। আবার কেউ ঘুরছেন বারান্দায়, কেউ বা বাইরে।

তাদের অপেক্ষা ডাক্তারের (চিকিৎসক) জন্য। এ অপেক্ষার শেষ কোথায় তাও জানা নেই কারও।

প্রতিনিয়ত এভাবেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় সাতক্ষীরার তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে হাসপাতালের অফিস রুমে বসার কথা দায়িত্বরত চিকিৎসকদের।   কিন্তু তারা নিয়ম না মেনে বাসায় রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ চিকিৎসকের বেশিরভাগই সময়মতো অফিস করেন না।

শনিবার (২০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) জিয়াউর রহমানকে রোগী দেখতে দেখা যায়। টিকিট কাউন্টারে ছিলেন কামরুল ইসলাম। টিকিট দিয়ে তিনি ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতে বলছেন রোগীদের।

সকাল ৯টায় আসেন ডা. শাহারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ডা. রাবেয়া, ৯টা ১০ মিনিটে আসেন ডাক্তার হাসানুজ্জামান এবং ৯টা ২০ মিনিটে আসেন ডা. সুমাইয়া।

এছাড়া হাসপাতালের আবাসিক ভবনে থাকেন ডা. আবু সাঈদ রিপন। শনিবার তিনি হাসপাতালে আসেননি।

এদিকে, চিকিৎসকরা সময়মতো না এলেও বেলা বাজার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল রোগীর সংখ্যা।

সকাল ১০টায় কাঞ্চননগরের আজারুল ইসলামকে দেখা গেল হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারের পাশের বেঞ্চে শুয়ে থাকতে। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় আইছি। বসতে পারছিনে। গায়ে জ্বর। সঙ্গে বমি হচ্ছে। তাই শুয়ে আছি। দেখি ডাক্তার কখন আসে।

উপজেলার শাহাপুর গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন ফরিদা বেগম। সকাল সাড়ে ১০টায় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফরিদা এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনারা একটু দেখেন। সকালে আসছি। এখনও ডাক্তার আসেনি। তাহলে কখন দেখবে। ডাক্তার দেখাতে এলেই, এভাবে বসে থাকতে হয়।

উপজেলার ঘোনা গ্রামের তপতি সরকার বাংলানিউজকে বলেন, সেই সকালে আসছি ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ডাক্তার নেই। অপেক্ষা করছি।

নির্ধারিত সময়ের ৪০ মিনিট পরে হাসপাতালে আসার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডা. হাসানুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ভাই এটা মেনে নিতে হবে। সব সময়তো সেবা দিয়ে যাই। দুই/একদিন সমস্যা হবে। মেনে নিতে হবে।

হাসপাতালের আবাসিক ডা. আবু সাঈদ রিপন বাংলানিউজকে বলেন, আমি বাইরে আছি। এজন্য যাইনি। তবে আমি নিয়মিত অফিস করি।

ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডাক্তার মো. জিয়াউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালে ২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন ১০ জন। এর মধ্যে দু’জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং অপর একজন দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় ছুটিতে আছেন।

এর বাইরে তিনি আর কোনো কিছু বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রতাপ কুমার ক্যাশাপী চিকিৎসকদের নিয়ম মেনে অফিস না করার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে বলেন, অনিয়মিত অফিস করায় কয়েকজন চিকিৎসককে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কিছু মানছেন না। নিজেদের মতো করে চলছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।