ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দক্ষ চিকিৎসক, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও যত্ন পেতে ব্যাংকক হাসপাতাল

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৬
দক্ষ চিকিৎসক, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও যত্ন পেতে ব্যাংকক হাসপাতাল ছবি: জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দক্ষ চিকিৎসক, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত সেবা-এ তিন কারণে  অন্য দেশগুলোর তুলনায় থাইল্যান্ডের চিকিৎসাকে এগিয়ে রাখা যায় বলে মনে করেন ব্যাংকক হাসপাতালের ইন্টার্নাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টা ডা. শক্তি রঞ্জন পল।
 
তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে এখন চিকিৎসকরা অনেকেই ইউরোপ-আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছেন।

তারা বেশ দক্ষ। বিশেষায়িত রোগের ক্ষেত্রে দক্ষ চিকিৎসকদের সংখ্যাও অনেক। এক্ষেত্রে রোগীরা বাছাই করে চিকিৎসক নির্বাচন করতে পারেন। চিকিৎসকরা রোগীদের অনেক সময় ধরে সমস্যার কথা শোনেন এবং পরীক্ষা করেন। সেখানে সংখ্যার চেয়ে গুণগত চিকিৎসার প্রতি নজর দেওয়া হয়।

নিজেও একজন রোগী দেখতে গড়ে ২২ মিনিট সময় দেন বলে জানান ডা. শক্তি।
তিনি বলেন, ব্যাংকক হাসপাতালকে বলা হয় ক্যাপিটাল অব টেকনোলজি। এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। আমরা একটি মেশিনের ওপর নির্ভর করি না। যেমন, একটি হাসপাতালেই চার-পাঁচটি এমআরআই মেশিন রয়েছে। পাঁচ-ছয়টি রয়েছে সিটি স্ক্যান মেশিন। বর্তমানে ক্যান্সার নির্ণয় এবং সেবা দিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।
 
এই হাসপাতাল ছাড়াও থাইল্যান্ডের চিকিৎসা সেবা অতুলনীয়। সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়াতে এটা পাওয়া যায় না। এখানকার নার্সরা খুবই যত্ন নিয়ে রোগীদের সেবা করে থাকেন। রোগীর প্রতি তাদের ব্যবহার এবং সেবার দৃষ্টির কারণে দুনিয়াজুড়ে মানুষের চিকিৎসা সেবাস্থল হয়ে উঠেছে ব্যাংকক।
 
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে বাংলানিউজ কার্যালয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যাংকক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে উঠে আসে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা সেবার তারতম্যের বিষয়গুলো।
 
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকক হাসপাতালের জনসংযোগ ও বিপণন ব্যবস্থাপক রাসেল মাহমুদ খান।

ডা. শক্তি বলেন, ভারতের পাঁচ তারকা হাসপাতালগুলোর সঙ্গে ব্যাংকক হাসপাতালের খরচের তেমন তারতম্য নেই। ফলে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীরা ব্যাংকককেই বেছে নেন।  

এছাড়া বাংলাদেশের পাঁচ তারকা হাসপাতালগুলোর খরচও কাছাকাছি।
 
তবে প্রযুক্তির পার্থক্য অনেক বড় বিষয় বলে মনে করেন জাতিসংঘের সাবেক এ চিকিৎসক। তিনি বলেন, দেখা যায় সিটি মেশিনে ৪৬ স্লাইস দিয়ে বাংলাদেশে রোগ নির্ণয় হয় না। সেখানে ব্যাংককে ২৫০ স্লাইস ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করা যায়। আর প্রযুক্তি ব্যবহার করতে ব্যাংকক হাসপাতালে রয়েছে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল।
 
বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও অনেক মেধাবী এবং সারা বিশ্বে নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে ব্যাংককে চিকিৎসকদের শৃঙ্খলার দিকটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- সেখানে একজন রোগীকে একঘণ্টা পর্যন্তও সময় দিতে হয়, ধৈর্য ধরে কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের রোগীর তুলনায় চিকিৎসক অনেক কম থাকায় হয়তো এখানে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না, বলেন তিনি।
 
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নাল মেডিসিনে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর জাতিসংঘের চাকরি নিয়ে বিদেমে চলে যান ডা. শক্তি।  

তবে বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন নেপাল, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে।
 
ব্যাংককে একমাত্র প্র্যাকটিশনারি চিকিৎসক তিনি। এরই মধ্যে বাংলাদেশে লাইফ অ্যান্ড হেলথ লিমিটেড নামে একটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন।
 
তিনি জানান, ব্যাংকক হসপিটালের তিনটি ওভারসিজ অফিস রয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকার বনানী ও ধানমন্ডিতে এবং চট্টগ্রামে।
 
দীর্ঘদিন জাতিসংঘে চাকরি করায় ২০০১ সালে থাইল্যান্ডেই স্থায়ী হয়েছেন ডা. শক্তি। সেখানে ব্যাংকক হাসপাতালের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।

থাইল্যান্ডে স্থায়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আসলে থাইল্যান্ডের মানুষ খুব ভালো। এ জন্যেই বলা হয় ল্যান্ড অব লাফ। সেখানে মানুষের মধ্যে অন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে যান্ত্রিকতা কম। তাদের মধ্যে মানুষের প্রতি সহমর্মীতা রয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভূমি থাইল্যান্ড।

ইন্টার্নাল মেডিসিনের দু’টি বিশেষ ক্ষেত্র ইনফেকসাস ডিজিজ (সংক্রামক রোগ। যেমন- ম্যালেরিয়া। ) ও মেটাবলিক ডিজিজের (বিপাকীয় রোগ, যেমন ডায়াবেটিস) রোগীদের দেখি আমি। এছাড়া বিগত ১০ বছরে পুরুষদের যৌন সমস্যার বিষয়েও পরামর্শ দিচ্ছি আমি।
 
ব্যাংকক হসপিটাল থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল কোম্পানি। যার ৫৫ শতাংশ রোগী থাই এবং ৪৫ শতাংশই বিদেশি। ব্যাংকক হাসপাতালের অধীনে ৪৬টি সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশি চিকিৎসক হিসেবে বিদেশি রোগী এবং বাংলাদেশি রোগীদের একটি বড় অংশকে চিকিৎসা সেবা দেন তিনি। এছাড়াও থাইল্যান্ডে চারটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. শক্তি।

যেসব রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাদের জন্য দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় থাইল্যান্ড যাওয়াকেই বেশি প্রাধান্য দেন ডা. শক্তি।  

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর এ অঞ্চলে সবচেয়ে উন্নত। কিন্তু চিকিৎসা খরচ ব্যাংককের চেয়েও কিছু ক্ষেত্রে ৫০ ভাগ বেশি। আর মালয়েশিয়ায় হেলথ ট্যুরিজমে এখনো নতুন।

থাইল্যান্ডের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর প্রয়োজনে রোগীকে জেলা, সেখান থেকে বিভাগ এবং প্রয়োজনে রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়। ভালো চিকিৎসা পাওয়াটা রোগীর অধিকার। ব্যাংককে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টিকে এভাবেই দেখেন ডা. শক্তি।
 
তিনি বলেন, এখানে পুশ (ধাক্কা দেওয়া) এবং পুল (টানা) ফ্যাক্টর কাজ করে। জীবনকে ভালোবেসে রোগীরা যান, ভাবেন জীবন না থাকলে অর্থ দিয়ে কী করবো! 

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক রোগীকে একবার আইসিইউ'র ভেন্টিলেশনে রাখা অবস্থার চিকিৎসকরা জীবনের আশা ছেড়ে দেন। ওই রোগীর আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো ছিল না। কিন্তু তার বন্ধুরা তাকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টায় নামেন। তারা অর্থ জোগাড় করে ব্যাংকক হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনদিনের মাথায় ওই রোগী বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

বাংলাদেশে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে লাইফ অ্যান্ড হেলথ লিমিটেডের অধীনে আগ্রহী রোগীদের হেলথ প্রোফাইল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোগীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসদের পরামর্শ ও পরীক্ষার ফাইল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে যায়। আমরা একটি প্রোফাইল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে আমাদের চিকিৎসকরাই রোগীর অবস্থা ও সব কাগজপত্র থেকে একটি প্রোফাইল তৈরি করবেন।
 
এ রোগী অন্য চিকিৎসকের কাছে দ্বিতীয়বার পরামর্শ নিতে বা বিদেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে মতামত জানতে এবং ফলোআপের সময় ওই প্রোফাইল ব্যবহার করতে পারবে। যার আপডেটও হতে থাকবে নিয়মিত। এছাড়া একটি হেলথ কার্ড দেওয়া হবে। যেখানে তার এসব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ব্যাংকক হসপিটালে ওই রোগীদের ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।

জরুরি সংকটাপন্ন রোগীদের ব্যাংকক হাসপাতালে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবাও রয়েছে। রোগীদের হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা, সেখানে অবস্থা বুঝে প্রথম শ্রেণীতে বা কয়েকটি সিট নিয়ে স্ট্রেচার এবং প্রয়োজনে আলাদা উড়োজাহাজেও নিয়ে যাওয়ার সেবা রয়েছে বলে জানান তিনি।
 
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে পাঁচজন রোগীকে এ সেবার মাধ্যমে ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়- বলেন ডা. শক্তি।
 
ইন্টার্নাল মেডিসিনের এ চিকিৎসক বলেন, ব্যাংকক হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা ডেস্ক রয়েছে। সেখানে সব ধরনের সাহায্য করা হয়, দোভাষীও থাকেন। আর ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের খোঁজ এবং সাক্ষাৎকারের দিন নির্ধারণ করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৬
এমএন/এসআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।