ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পঙ্গুর কর্মচারীর ‘সুপারিশে’ ট্রমায় রোগী

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
পঙ্গুর কর্মচারীর ‘সুপারিশে’ ট্রমায় রোগী  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর ডেমরা থেকে বোন রোকেয়াকে নিয়ে শ্যামলীতে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা করাতে এসেছেন রিকশাচালক মো. সাব্বির। এক দুর্ঘটনায় গাড়ির  কাঁচ দিয়ে তার হাত কেটে গেছে।

ঢাকা: রাজধানীর ডেমরা থেকে বোন রোকেয়াকে নিয়ে শ্যামলীতে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা করাতে এসেছেন রিকশাচালক মো. সাব্বির। এক দুর্ঘটনায় গাড়ির  কাঁচ দিয়ে তার হাত কেটে গেছে।

পঙ্গু হাসপাতালে টিকিট কেটে চিকিৎসককে দেখিয়েছেন তিনি। চিকিৎসক তাকে দু’টি পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু এর একটিও এই হাসপাতালে করা যায়।

এক পর্যায়ে মাসুদ রানা নামে পঙ্গ‍ু হাসপাতালের এক কর্মচারী তাদের অনেক বুঝিয়ে ‘ট্রমা সেন্টারে’ নিয়ে গেলেন। সেখানে বলা হয়, এ দুই পরীক্ষা করাতে লাগবে ৬ হাজার টাকা।

কিন্তু রিকশাচালক সাব্বিরের হাতে এতো টাকা নেই। আছে এর অর্ধেক। এ নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। এ সময় যেনো তাদের পরামর্শ দিয়ে অনেকটা দুঃশ্চিন্তা থেকে ‘উদ্ধার’ করলেন মাসুদ রানা।

বললেন, ‘কোনো সমস্যা নেই, আপনারা অর্ধেক টাকা দেন, বাকিটা বাসায় বলে ম্যানেজ করুন। ’

ট্রমা সেন্টারের সামনে রোগীর ভাই সাব্বিরসহ মাসুদ রানার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। এ সময় মাসুদ নিজেকে পঙ্গু হাসপাতালের স্টাফ হিসেবে নিজেকে দাবি করেন।

আর মানবিকতার খাতিরেই সাব্বিরদের সহায়তা করতে ‌এগিয়ে এসেছেন বলে জানালেন তিনি।

 বাংলানিউজকে মাসুদ বলেন, ‘এরা আমার আত্মীয় না। গরিব মানুষ তাই আমি নিয়ে এলাম, সুপারিশ করে দিবো। যাতে কিছু টাকা কম নেয়। ট্রমাতে টেস্ট দুইটা করাতে ৬ হাজার টাকা চেয়েছিলো আমি কমিয়ে তা ৫ হাজারে এনেছি। ’
 
সোমবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যয়বহুল এই হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশির ভাগই এসেছেন পঙ্গু হাসপাতালে, অনেকে এসেছেন কোনো চিকিৎসক বা কর্মচারীর সুপারিশে।

সাব্বিরের মতো একই ঘটনা ঘটেছে উত্তরবঙ্গের নীলফামরী থেকে ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল হামিদেরও।

সাত মাস আগে পোল্ট্রি মুরগির খাবার তৈরির কারখানায় এক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান তিনি। রংপুরের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু পায়ের কোনো উন্নতি তো হয়-ই নি উল্টো ভ‍াঙা স্থানে ঘা হয়ে গেছে।

হামিদের ভাষ্য, ‘ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে তারা বলে, পা ঠিক হতে তিন বছর সময় লাগবে। পরে পঙ্গুর ডাক্তারের পরামর্শে ট্রমা সেন্টারে এসেছি। ’

হামিদের বাবা বলেন, অনেক টাকা খরচ করছি। কিন্তু ছেলের পা ভালো হচ্ছে না। তবে রক্ষা চিকিৎসার খরচ ওই কারখানার মালিক বহন করছেন।

ট্রমা সেন্টারের নিচতলায় রোগীর সঙ্গে আসা কয়েকজন স্বজন জানালেন, রোগীদের বেশির ভাগই পঙ্গু হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন এখানে।

‘পঙ্গুতে কারো অনেক সময় লাগবে, কারো পরীক্ষা করাতে সমস্যা, কেউ কেউ ডাক্তারের পরামর্শে এখানে এসেছেন। সেখানে গেলে হাত-পা ভাঙার অবস্থা বেশি দেখলেই ট্রমাতে পাঠানোর চেষ্টা করে। ’

মো. হাসিব নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, সরকারি হাসপাতালে গরীবের চিকিৎসা নাই। গরীবদের চিকিৎসা করতে গেলে এটা নাই, ওটা বলে তারা। জমি জমা বেঁচে আমাদের প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়। ’

‘আমার তো মনে হয় ট্রমা থেকে এসব ডাক্তার কর্মচারী কমিশন খায়। নয়তো ওখানে গেলে শুধু ট্রমায় পাঠানো হয় কেন?’

ট্রমা সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ব্যয় একটু বেশি হলেও ভালো চিকিৎসার জন্যে পঙ্গু হাসপাতাল রেখে এখানে আসেন রোগী। অনেক সময় সরকারি হাসপাতালে টেস্টসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধারও অভাব থাকে।  

তবে এ বিষয়ে পঙ্গু হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এমসি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।