ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অভিজাতদের অভিযোগ নেই ইউনাইটেডে!

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
অভিজাতদের অভিযোগ নেই ইউনাইটেডে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রোগীকে অচেতন করে যৌন নির্যাতন কিংবা চাহিদা মতো টাকা পরিশোধ না করায় মরদেহ আটকে রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলো ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল। তবে নেতবিাচক এসব ইমেজ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে হাসপাতালটি।

ঢাকা: রোগীকে অচেতন করে যৌন নির্যাতন কিংবা চাহিদা মতো টাকা পরিশোধ না করায় মরদেহ আটকে রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলো ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল। তবে নেতবিাচক এসব ইমেজ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে হাসপাতালটি।

রোববার (২৭ নভেম্বর) গুলশান-বারিধারার ইউনাইটেড হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে আগের চেয়ে ভিন্নরকম পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

বিভিন্ন বিভাগের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। কেউবা আবার রিপোর্ট কিংবা স্বজনদের সাক্ষাতের অপেক্ষা করছেন। অভিজাতদের এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে জরুরি বিভাগের উল্টো দিকে রিসিপসনে কিছুটা ভিড় দেখা যায়।

নিচ তলায় ফার্মেসি, রিপোর্ট ডেলিভারি এবং বিভিন্ন বিভাগের সামনে রোগীর স্বজনেদর আনাগোনা বেশি। দু’একজন রোগীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা রোগের বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। হাসপাতালের ভোগান্তি বা অসহযোগিতা নিয়ে মুখ খোলেননি কোনো রোগী ও তার স্বজন।

তাদের কথা, বেশি টাকা খরচ করি কিছুটা স্বস্তির জন্য। এ জন্যই অভিজাত হাসপাতালে আসা। সুতরাং কেন তারা রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলবেন, উল্টো এমন প্রশ্নও ছুড়েন তারা।

তবে একজন রোগীর স্বজন অপারেশনের সময় (নির্ধারিত সময়ে অপারেশন) নিয়ে নিজেদের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সাংবাদিক পরিচয় দিলে এ বিষয়ে আর কিছুই বলেননি তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই স্বজন বলেন, ‘না কোনো সমস্যা নেই। সব ঠিক আছে। সময় মতো অপারেশন হবে। ’

ইউনাইটেড হাসপাতালের সেবা নিয়ে তৃপ্তির কথা জানালেন চট্টগ্রাম থেকে আসা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ী। হার্টের চিকিৎসা করাতে আসা আলী নামে একব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ২-৩ মাস পরপরই চেকআপ করাতে এখানে আসি। চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট বলেই বারবার আসি। ’

কয়েকবার দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়া এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউনাইটেডে অনেকটা হলেও বিদেশের সেই পরিবেশটা পাই। তবে প্রচুর টাকা খরচ হয়। যা সাধারণের জন্য দেওয়া কষ্টসাধ্য। ’

তার এ কথার সত্যতা পাওয়া গেল মধ্যবিত্ত কয়েকজন রোগীর স্বজনের কাছে। রাজশাহী থেকে হার্টের চিকিৎসা করাতে আসা একজন রোগীর ভাই রায়হানুল আলম সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাস্তার মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পরে কয়েকজনের পরামর্শে আমার ভাইকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করি। দুই সপ্তাহে ব্যবধানে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই খরচ বহন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আবার রোগীকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া এখন বেশ ঝঁকিপূর্ণ। তাই বাধ্য হয়েই এখানে আছি। ’

তবে জানাহারা ইসলাম নামে আরেকজন রোগী প্রয়োজনীয় কয়েকটি টেস্ট করিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পথে এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাসপাতালটির খরচ বেশি হলেও এখানকার সেবা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ডাক্তার-নার্সরাও আন্তরিক।

হাসপাতালটি নিয়ে নানা অভিযোগের কথা শুনে থাকলেও তিনি বলেন, এখনকার অবস্থা দেখে মনে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সুনাম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। আশা করি তারা সেবার ব্রত ধরে রাখবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে একজন নারী আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অপারেশন হওয়ায় তিনি অজ্ঞান ছিলেন। এ সুযোগে হাসপাতালের ব্রাদার সাইফুল ইসলাম তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। পরে ওই ব্রাদারকে চাকুরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

এরআগে ২০১৪ সালে ৩ জুলাই ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে আছলাম নামে একব্যক্তি ইউনাইটেড হাসপাতলে ভর্তি হন। এরপর থেকেই তিনি করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু সব বিল পরিশোধ করতে না পারায় মরদেহ দুই দিন আটকে রাখা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
জেপি/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।