ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অ্যাপোলোর জরুরি বিভাগে পা দিলেই ২০ হাজার!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
অ্যাপোলোর জরুরি বিভাগে পা দিলেই ২০ হাজার! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কঠিন রোগে আক্রান্ত বা মুমূর্ষু রোগীরাই প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণে যেকোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। অথচ বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপোলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলেই ফাঁদে পড়ছেন রোগীরা।

ঢাকা: কঠিন রোগে আক্রান্ত বা মুমূর্ষু রোগীরাই প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণে যেকোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। অথচ বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপোলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলেই ফাঁদে পড়ছেন রোগীরা।

জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অ্যাপোলো হাসপাতালের এ বিভাগে কোনো রোগী চিকিৎসা নিতে এলে ডাক্তার দেখিয়ে সিটি স্ক্যান ও রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। ফলে রোগীকে দুই ঘণ্টার জন্য ভর্তি হতে হবে। এখানে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে হলে রোগীকে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচও  করতে হবে। যা মাত্র ২ ঘণ্টার জন্য, অর্থাৎ রক্ত ও সিটি স্ক্যান পরীক্ষার রিপোর্ট আসা পর্যন্ত। এসব শেষ করে রোগীকে বেডে দিতে চাইলে আলাদা পেমেন্ট দিতে হবে।
 
রোববার (২৭ নভেম্বর) অ্যাপোলো হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরুরি বিভাগের এমন গলাকাটা অর্থ আদায় নিয়ে অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন বাংলানিউজের কাছে।

অ্যাপোলো হাসপাতালের দায়িত্বরত ডেপুটি ম্যানেজার মাসুম বাংলানিউজকে জানান, জরুরি বিভাগে রোগী এলে তার রোগের ধরন ও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়। বিশেষ করে রোগী বেশি সিরিয়াস হলে তার জন্য আলাদা ফি দিতে হয়। হার্টের রোগী হলে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে ৬০ হাজার টাকাও লাগতে পারে।   জরুরি বিভাগে চিকিৎসার খরচ ২০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে ডাক্তারের ফি ও পরীক্ষার ফি’ও সংযুক্ত। এর বেশিও হতে পারে।
 
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক এক রোগী বলেন, ‘বেশ কিছু প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার পর এখানে এলাম। তবে এসে শুনি, এখানে জরুরি বিভাগে ভর্তি ছাড়া রোগীর চিকিৎসা করা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হলো। কিছু পরীক্ষা করানো হয়েছে, রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে’।
 
মো: শাহাবুদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে পায়ের ব্যথায় ভুগছেন। নানা চিকিৎসার পরও ব্যথা সারছে না। সম্প্রতি তা অসহনীয় পর্যায়ে গেছে। একজনের পরামর্শে অ্যাপোলোতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে জরুরি বিভাগে যান। জানানো হয়, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে হলে ত‍াকে ভর্তি হতে হবে। এর জন্য খরচ পড়বে প্রায় ২২ হাজার টাকা।
 
পরে তিনি বাধ্য হয়ে (রোববার) বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখান। সেখানেও তার চিকিৎসকের ফি ও আল্টাসাউন্ডসহ প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়।
 
শাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ধনী নই, তবে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছি। তাই মানুষের পরামর্শে বেশি টাকা খরচ হবে জেনেও এখানে এলাম। এখন, সমস্যা ভালো হলেই হয়’।
 
‘ঘুরে একটা জিনিস বুঝলাম, এখানে যাদের টাকা যতো বেশি, চিকিৎসা ততো উন্নতমানের’ বলেও মন্তব্য করেন এ রোগী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থেকে চিকিৎসা নিতে মেয়ের বাসায় এসেছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা খসরু মিয়া। টানা তিনদিন চেষ্টা করে গ্রাউন্ড ফ্লোরের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল পেয়েছেন।
 
খসরু জানান, ‘এখানকার চিকিৎসাসেবা ভালো, তবে খরচও অতিরিক্ত। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে ডাক্তার দেখাতে এলে কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়’।
 
হাসপ‍াতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যাপোলোতে রোগী চিকিৎসা নিতে এলে তাকে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার পর একটি নম্বর দেওয়া হবে। নম্বরে রোগীর যাবতীয় তথ্য জমা থাকবে। রোগীকে প্রথম চিকিৎসক দেখানোর সময় ভিজিটের সঙ্গে এ রেজিস্ট্রেশন কার্ডের জন্য আড়াইশ’ টাকা দিতে হবে।
 
২৬টি বিভাগে সেবা প্রদানকারী ৪৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাইরে থেকে খাবার আনা সম্পূর্ণ নিষেধ।

নাম ‍প্রকাশে অনিচ্ছুক রেডিওলজি বিভাগের একজন কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করি। অ্যাপোলোর মতো খরচ কোথাও নেয় না। এখানে ডাবল খরচ নেওয়া হয়। এখানে শেয়ারে বেডে থাকলে চার হাজার ৮০০ টাকা, আরেকটু উন্নতমানের হলে আট হাজার ৮০০ টাকা, ডিলাক্স বেড ৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং ভ্যাটসহ স্যুট ২২ হাজার টাকা পড়বে’।
 
তিনি বলেন, ‘এখানে ডাক্তার দেখাতে চাইলে ১০ হাজার টাকার নিচে আসা যাবে না। ‌আপনার অবস্থা ভালো হলে লাখ লাখ টাকা খরচ হবে। আসলে এটা তো বড়লোকদের হাসপাতাল!’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
এমসি/এসএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।