ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফিরে দেখা-২০১৬

ট্রি-ম্যান, প্যারাসিটিক টুইন’র সফল অস্ত্রোপচার

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
ট্রি-ম্যান, প্যারাসিটিক টুইন’র সফল অস্ত্রোপচার ট্রি-ম্যান রোগে আক্রান্ত আবুল বাজনদার

ঢাকা: কড়া নাড়ছে নতুন বছর, চলে গেলো ‘২০১৬ সাল’। বিদায়ী বছরে দেশের চিকিৎসা সেবাখাতে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা এবং বড় সফলতা ট্রি-ম্যান রোগে আক্রান্ত আবুল বাজনদার এবং বাগেরহাটের মো. জাকারিয়ার জোড়া লাগা শিশুর (প্যারাসিটিক টুইন) সফল অস্ত্রোপচার।

খুলনার পাইকগাছার সরলবাতিখালি গ্রামের মানিক বাজনদারের ছেলে আবুল বাজনদার চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বিরল ট্রি-ম্যান রোগের আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসেন। তার মা আমেনা ও বড় বোন আদুরি সঙ্গে আসেন।



প্রায় দশ বছর আগে তার শরীরে আঁচিল ওঠে, পরবর্তীতে সেগুলো বাড়তে থাকে। প্রথমে আবুল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নেন। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় স্থানীয় অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ফল না হওয়ায় ভিক্ষা করে টাকা জোগাড় করে পাঁচ বছর আগে চিকিৎসা নিতে আবুল কলকাতা যান। একবার নয়, পাঁচ থেকে ছয়বার কলকাতা যান। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, ওষুধে কাজ হবে না- সার্জারি প্রয়োজন।

পৃথিবীতে বাংলাদেশসহ এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকজনকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। তাদের ইন্দোনেশিয়ায়, রোমানিয়া এবং সর্বশেষ এই বাংলাদেশে দেখা গেলো।

ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত হাতে ও পায়ে সব মিলিয়ে ১৭টি অস্ত্রোপচার করা হয় আবুলের। এর মধ্যে কয়েক দফায় দুই হাতে ১৪টি ও দুই পায়ে ৪টি অস্ত্রোপচার করা হয়। এদিনও তার ডান হাতে ফের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। বর্তমানে আবুল পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। পাশে রয়েছেন তার স্ত্রী হালিমা বেগম ও এক মাত্র মেয়ে তাহিরা।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, আবুল বাজনদারের আরো বেশ ক’টি অস্ত্রোপচার দরকার হবে।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ১৮ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করে ২০ জুন বাগেরহাটের মো. জাকারিয়া-হীরামনি দম্পতির অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুর (অপূর্ণাঙ্গ যমজ-প্যারাসিটিক টুইন) সফল অস্ত্রোপচার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগ গঠিত এই টিমে উপদেষ্টা সার্জন হিসেবে ছিলেন পেডিয়াট্রিক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শফিকুল হক, অধ্যাপক ডা. মো. মতিউর রহমান ও অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন, অধ্যাপক ডা. মো. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. কে এম দিদারুল ইসলাম, ডা. দিনেস প্রসাদ কৈরালা, ডা. একেএম খায়রুল বাসার, ডা. নূর মোহাম্মদ ও ডা. মাফিয়া আফসিন লাজ।

অ্যানেসথেসিয়া টিমে অ্যানেসথেসিয়া, এনালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হাই, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মনজুরুল হক লস্কর, ডা. মো. আব্দুল আলীম ও ডা. সাফিনা সুলতানা সম্পা এবং নবজাতক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দে।

বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের মনিটরে সরাসরি সম্প্রচার করে ওই শিশুর অস্ত্রোপচার।

বিদায়ী বছরের ৭ মার্চ বাগেরহাটে জোড়া লাগানো যমজ সন্তানের হয়। দুই শিশুর মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ, অন্যটি অপূর্ণাঙ্গ শিশু। অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির মাথা, বুক ও দুই হাত নেই। অর্ধেক শরীর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশুর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার (জনসংযোগ) প্রশান্ত কুমার মজুমদার জানান, ২০১৬ সালে এটি একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা ছিলো। একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কোলে তুলে দেন। সম্পূর্ণ সুস্থভাবে, কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই সে বাড়ি ফিরে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।