ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

৯ বছরেও নতুন ভবন পায়নি শেবাচিম হাসপাতাল!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
৯ বছরেও নতুন ভবন পায়নি শেবাচিম হাসপাতাল! ৯ বছরেও নতুন ভবন পায়নি শেবাচিম হাসপাতাল!

বরিশাল: বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ৫০০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়নি গত ৯ বছরেও। আইনি জটিলতাসহ নানা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতিতে ২৭ মাসের এ প্রকল্প দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে গেছে।

ফলে জায়গা ও জনবল সংকটে হাসপাতালের কার্যক্রম চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। কাঙ্খিত সেবা না পাওয়াসহ দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা জানায়, ১৯৬৮ সালে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এর কয়েক বছর পরে কলেজের সামনের হাসপাতাল ভবনে পুরোদমে শুরু হয় চিকিৎসাসেবার কার্যক্রম। ২০১৩ সালে হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যা থেকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়।

গনপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের মার্চ মাসে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০তলা ভিত বিশিষ্ট নতুন ৭তলা ভবন নির্মাণের চুক্তি সম্পাদিত হয়। আনুষঙ্গিক কাজসহ হাসপাতাল ভবন নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ধরা হলেও ১৫.৮৫ শতাংশ কমে নিম্ন দরদাতা হিসেবে ২১ কোটি টাকায় কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

পরবর্তীতে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৭তলার স্থলে ৫তলা পর্যন্ত ভবনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাড়ে ৮ কোটি টাকার কাজ বাকি থাকতেই ২০১২ সালের আগস্ট মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ধরা পড়ে। ফলে ভবন নির্মাণের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। পরের মাসে উচ্চ আদালতে রিট করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে ভবন নির্মাণ কাজ পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে।

২০১৪ সালে নতুন শিডিউল করে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্নের ব্যয় ধরা হয় ১৯ কোটি টাকা। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে ৫৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়া ভবনটি পড়ে রয়েছে একই অবস্থায়।

আর নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে ৯ বছর চলে গেলেও নতুন ভবনে যেতে পারেনি শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওসমান গনী বাংলানিউজকে জানান, আগের জটিলতা শেষ করে ভবনটির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে ২০১৫ সালে যে টেন্ডার হয়েছিলো, তাতে প্রথম ও দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতার কাগজপত্রে জটিলতা ছিলো। দীর্ঘদিন পরে মন্ত্রণালয় সে টেন্ডারটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

১০ কোটি টাকার ব্যয় নির্ধারণ করা থাকলেও এখন নতুন করে এস্টিমেট করে আগামী ২/১ সপ্তাহের মধ্যে টেন্ডার আহবান করা হবে। ফলে সামনের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) মধ্যে কাজ শুরু হয়ে ১ বছর মেয়াদকালের মধ্যেই ভবনের বাকি কাজ শেষ করা হবে।

তিনি জানান, এর বাইরেও পুরো ভবনকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে চালু করতে ১৬ কোটি টাকার অনুমোদন পাওয়া গেছে। এর কাজ নতুন ভবন নির্মাণ শেষে শুরু হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাগজে-কলমে ১ হাজার শয্যা হলেও ৫০০ শয্যার ভবনেই চলছে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।

এ হাসপাতালের ১৮ বিভাগে বর্তমানে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। রোগীদেরকে বারান্দায় রাখার পাশাপাশি জায়গা সংকটে অনেক ওয়ার্ডের বরাদ্দকৃত বেডও বারান্দায় বসানো হয়েছে।

স্থান সংকটে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহতের পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। প্রতিনিয়তই ভর্তি রোগীদের থাকতে হয় হাসপাতালের মেঝেতে নয়তো ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায়। প্রসূতি, মহিলা মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডের রোগীদের এ দুর্গতি তো ১২ মাসই থাকে।

হাজার শয্যার অনুপাতে নেই চিকিৎসকসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবলও। নতুন ৫০০ শয্যার ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এ ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক এসএম সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
এমএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।