ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আস্থা নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
আস্থা নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে! গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স- ছবি: বাংলানিউজ

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) থেকে: হাসপাতালে দুর্গন্ধময় পরিবেশ, অব্যাবস্থাপনা, ডাক্তারদের অপেশাদার আচরণ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকার কারণে হাসপাতালের পরিবর্তে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারেই আস্থা রাখছেন ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও এলাকার সাধারণ মানুষ।  

গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের অপেশাদার স্বল্পভাষী আচরণের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আস্থা হারিয়ে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারের দিকে ঝুকছেন এই এলাকার মানুষ। এতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হলেও সময় নিয়ে সঠিক রোগ নির্ণয়ে আস্থাভরে তাদের ছুটেচলা বিভিন্ন জায়গার ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে।

এরই সুযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ডাক্তারগণ সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে বিভিন্ন ডায়গনষ্টিক সেন্টার বা নিজস্ব প্রাইভেট চেম্বারে এসে বসেন। আর সেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ভিজিটের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন এই এলাকার মানুষ। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রায় প্রতিদিনই গফরগাঁও আসেন রোগী দেখতে। সকালে এসে আবার বিকেলে ট্রেনযোগে ঢাকা বা ময়মনসিংহে ফিরেন তারা।

ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো রোগী গেলে ডাক্তার কিছু শুনে বা শুনে তাদের ইচ্ছেমতো ওষুধ বা চেকআপ লিখে দেন। তাদের যে কোম্পানি অপঢৌকন দেয় তারা সেই কোম্পানির ওষুধ লেখেন। এছাড়া বাইরের ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সঙ্গে তাদের গোপন চুক্তি থাকার ফলে কোনো কিছু হলেই তারা চেকআপের জন্য নির্দিষ্ট ডায়গনষ্টিক সেন্টারে প্রেরন করেন। এরপর একগাধা ওষুধ লিখে দেন।  

অপরদিকে, চেম্বারে যারা রোগী দেখেন তারা হাসিমুখে রোগীর সব খোঁজ-খবর নিয়ে তারপর ব্যাবস্থাপত্র দেন। এক্ষেত্রে যেসব ডায়গনষ্টিক সেন্টার তাদের এখানে নিয়ে আসেন তাদের খুশি করতে দু-একটি চেকাপ দিলেও ডাক্তার ও সেন্টারের মানুষের অমায়িক ব্যাবহারে তারা তা ভুলে যান।

এমনকি হাসপাতালে এসব ডাক্তারে কাছে গেলে রোগীদের সঙ্গে বাজে ব্যাবহার করেন তারাও যখন তাদের বাসা বা প্রাইভেট চেম্বারে বসেন তখন তাদের স্বর আপনাআপনি পাল্টে যায়। তাদের মুখেও ফুটে হাসি। তাদের কথাতেও আসে মাধুর্য। তাই এখানকার মানুষ রোগ সারাতে হাসপাতালের পরিবর্তে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারকে সাদরে গ্রহন করছেন।

এক্ষেত্রে টাকা বেশি গেলেও ভাল ব্যাবহার ও সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতে প্রাইভেট চেম্বারেই ঝুঁকছেন রোগীরা।

অনেক সময় হাসপাতালে থাকা চিকিৎসকরা কৌশলে ওয়ার্ড বয় ও দালালদের সাহায্যে হাসপাতালে আসা রোগীদেরকে তাদের বাসা বা প্রাইভেট চেম্বারে পাঠান। কিছুক্ষন পর নিজে গিয়ে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখে আসেন।

আফসানা রহমান তার এক বছরের মেয়ে শিশুকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা থেকে আসা এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। হাসপাতাল রেখে এখানে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মেয়ে জন্মের সময়ে এই হাসপাতালে আসতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি সেসময়ে আমার প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা পাইনি। উপরন্ত একে ওকে খুশি করতে আমার কয়েক হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। এরপর থেকে হাসপাতালের উপর থেকে আমার সকল ভক্তি উঠে গেছে। টাকা যাক তার পরেও সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারই ভাল।

অপরদিকে হাসপাতাল থেকে ফিরে এক প্রাইভেট  চেম্বারে আসা সাইদুর রহমানের সাথে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, হাসপাতালে গিয়েছিলাম কিন্তু উনি (হাত দিয়ে একজনকে দেখিয়ে) বললেন হাসপাতালের চেয়ে এখানে নাকি ভাল চিকিৎসা হয়। তাই এখানে এসেছি!

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলম আরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। আমি স্বীকার করি হাসপাতালের এক শ্রেণীর ডাক্তার রয়েছেন যারা রোগীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। আসলে ডাক্তারদের পেশা মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যাবহার করে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া। কিন্তু অনেকে তা করেনা। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। তাদের প্রাপ্য সেবা তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
ডিআর/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।