ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যমেক কর্মচারীদের রক্ত চুষছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
যমেক কর্মচারীদের রক্ত চুষছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যমেক

যশোর: যশোর মেডিকেল কলেজে (যমেক) আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৬৫ জন কর্মচারীর রক্ত চুষে খাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উষা সিকিউরিটিজ লিমিটেড। প্রতিমাসে কর্মচারীদের কষ্টের টাকা থেকে অন্তত তিন লাখ টাকার কমিশন যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ২০১২-১০১৩ অর্থবছর থেকে কর্মচারীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করলেও বিশেষকারণে ব্যবস্থা নিতে পারছে না যমেক প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা তিন অর্থবছরে যশোর মেডিকেল কলেজে কর্মচারী (এমএলএসএস, টেবিলবয়, কুক, মশালচি, সিকিউরিটি গার্ড, সুইপার ও প্লাম্বার) নিয়োগের কার্যাদেশ পায় উষা সিকিউরিটিজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী বর্তমানে কর্মচারীদের মূল বেতন ১৪ হাজার ৪শ ৫০ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও প্রত্যেক কর্মচারীর প্রতিমাসের বেতন থেকে জোর করে পাঁচ হাজার টাকা করে কেটে নেওয়‍া হচ্ছে।

যমেক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বাংলানিউজকে বলেন, বছরের পর বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের রক্ত ঘামানো বেতন থেকে কমিশন আদায় করলেও প্রতিকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। কর্মচারী ইউনিয়ন এখন আন্দোলনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নেতাদের অভিযোগ, প্রতিবাদ করতে গেলেই ঠিকাদারের নিয়োগ করা দালালরা কর্মচারীদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয়। নতুন অর্থবছরে তাদের চাকরি খাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। সম্প্রতি এক নারী কর্মচারী প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের এক দালাল হাসপাতালে তাকে মারধর করতে উদ্যত হয়েছিলেন। অনেকটা নিরূপায় হয়েই ৬৫ জন কর্মচারীর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন প্রতিমাসে বেতন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেন।

তবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা ৫-৭ জন কর্মচারীকে ঘুষ দেওয়া লাগে না বলেও জানান নেতারা।

সূত্র আরও জানায়, উষা সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৫৫ জন কর্মচারীকে ৮ হাজার ৭শ টাকার বেতনে সাক্ষর করিয়ে নিলেও তারা দিয়েছে ৭ হাজার টাকা। এবং ২০১৫-২০১৬ এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৬৫ জন কর্মচারীকে নিয়মানুযায়ী ১৪ হাজার ৪শ ৫০ টাকা বেতনের চেক দিলেও পাঁচ হাজার টাকা হারে কমিশন আদায় করছে।  

এরআগে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে গালফ সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৪৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয় যমেক। প্রথম নিয়োগের সময় অস্থায়ী চাকরি স্থায়ীকরণের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও যমেকের তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) আরিফুজ্জামান প্রত্যেক কর্মচারীর কাছ থেকে ১৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দেন। তবে খাতা-কলমে এ কর্মচারীদের বেতন ৭ হাজার ২শ টাকা ধার্য করা হলেও বাস্তবে দেওয়া হতো ৪ হাজার ২শ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে উষা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক মাগুরার বাসিন্দা ফিরোজ হোসেনের মোবাইলে (০১৭৭০-০৬৬১০২) একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার নিয়োগ করা সুপারভাইজার কোরবান আলী প্রথমে ঘুষ আদায়ের কথা অস্বীকার করলেও ঘুষের চেকএবং অন্য প্রমাণপত্র তুলে ধরলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঠিকাদারের সামান্য বেতনে কাজ করি। ওনার নির্দেশে কর্মচারীদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়ে তাকে দিয়ে দেই। এটা কীসের টাকা সেটাও আমি জানি না।

যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. এ এইচ এম মাহবুব উল মওলা চৌধুরী  বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমত বিষয়টি আমি জানি না। আর এটা সম্পূর্ণ ঠিকাদারের ব্যাপার।

তবে কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপরে সরকারি নীতিমালা ও ন্যূনতম বেতন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকথা ফোনে বলা যায় না, সরাসরি আসেন কথা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২ ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।