ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কফিপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ আনছে ‘কফি রাস্ট’

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
কফিপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ আনছে ‘কফি রাস্ট’ কফি

ঢাকা: সকালে ঘুম থেকে উঠে বা বিকেলের ক্লান্তিটা দূর করতে কফির বিকল্প ভাবতে পারেন না অনেকেই। শুধু ঘুম তাড়াতেই নয়, কফির আরও নানাবিধ উপকারিতার কথা বলে থাকেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বিশ্বের কফি শিল্প মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ‘কফি রাস্ট’ নামের এক প্রকার রোগের কারণে।

কফি রাস্ট শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কফি চাষিদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি এক প্রকার ফাঙ্গাস সংক্রমিত রোগ।

হেমিলিয়া ভাস্টাট্রিক্স (Hemileia Vastatrix) নামক ফাঙ্গাস এর জন্য দায়ী।

এ ফাঙ্গাস সংক্রমণে কফি গাছের পাতায় বাদামি রঙের ছোপ দেখা দেয়। এই ছোপগুলো দেখতে অনেকটা লোহার মরিচার মতো হওয়ায় রোগটির নাম দেওয়া হয় কফি রাস্ট। রোগাক্রান্ত গাছের পাতা সবুজ থেকে বাদামি রং ধারণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে গাছটি বীজ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।  

উনিশ শতকের শেষ দিকে শ্রীলংকা, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কফি রপ্তানিতে শীর্ষে অবস্থান করছিল। কিন্তু কফি রাস্টের কারণে দেশগুলো কফি উৎপাদন থেকে সরে এসেছে। শ্রীলংকার কফি শিল্প ধ্বংসের জন্য এ রোগকেই দায়ী করেন ইতিহাসবিদরা।  

বিশ্বে কফি উৎপাদন ও রপ্তানিতে কলাম্বিয়ার অবস্থান তৃতীয়। ২০১৬ সালে কফি রপ্তানি করে দেশটি দুই দশমিক চার বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কলাম্বিয়ার মোট রপ্তানি আয়ের সাত দশমিক সাত শতাংশই আসে কফি খাত থেকে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে দেশটির কফি শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে কফি রাস্টের কারণে।  

তাই অনেক বছর ধরেই কলাম্বিয়ার গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কফি রাস্টের হাত থেকে সেদেশের কফি শিল্পকে বাঁচানোর উপায় খুঁজে বের করতে। সম্প্রতি একটি সমাধানও খুঁজে পেয়েছেন তারা।  

গবেষণায় দেখা গেছে, সব ধরনের কফি গাছ এ রোগে আক্রান্ত হয় না। গবেষণার স্বার্থে কফি গাছকে দু’টি প্রজাতিকে ভাগ করা হয়েছে। এদের একটির প্রচলিত নাম ‘বিউটি’। এ প্রজাতির কফি হয় স্বাদে, গন্ধে ও মানে উন্নত। উৎপাদনও তুলনামূলক ব্যয়বহুল। তবে এতে কফি রাস্টের ঝুঁকি বিদ্যমান।

অপর প্রজাতিটির প্রচলিত নাম ‘বিস্ট’। বিশ্বে এ প্রজাতির কফি তেমন জনপ্রিয় নয়। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এ প্রজাতির গাছগুলো কফি রাস্টে আক্রান্ত হয় না।  

তাই গবেষকরা এ দুই প্রজাতির কফি গাছের ডিএনএ নিয়ে নতুন হাইব্রিড তৈরির চেষ্টা চালান। গবেষকদের লক্ষ্য ছিল, নতুন হাইব্রিড প্রজাতিটি যেন স্বাদে, গন্ধে ও মানে উন্নত হয় এবং একই সঙ্গে কফি রাস্ট প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।  কফি পাতা

বহু চেষ্টার পর গবেষকরা একধরনের হাইব্রিড তৈরি করতে পেরেছেন যার নাম ক্যাস্টিলো। এই ক্যাস্টিলো জাতের গাছে কফি রাস্ট সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এর গুণগত মানও বেশ ভালো।  

২০০৮ সালে কাফি রাস্টের আক্রমণে কলাম্বিয়ার ২৫ শতাংশ কফি ক্ষেত নষ্ট হয়। এরপর থেকে কলাম্বিয়া সরকার কফি চাষিদের ক্যাস্টিলো চাষের উপর জোর দেয়। বর্তমানে সেদেশের ৭৬ শতাংশ খামারে ক্যাস্টিলো চাষ হচ্ছে।  

কলাম্বিয়ার গবেষকরা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কফি রাস্ট মোকাবেলায় ক্যাস্টিলো জাতের কফি চাষের গুরুত্ব তুলে ধরছেন। তাছাড়া কফি আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের এর আর্থিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানানো হচ্ছে।  

কিন্তু কফিপ্রেমীরা যেন বরাবরই একটু খুঁতখুঁতে প্রকৃতির। কফি স্বাদ ও গন্ধে একদম নির্ভেজাল না হলে যেন চলে না। তাই বাজারে ক্যাস্টিলোর সফলতা অর্জনের জন্য কফিপ্রেমীদের কাছে এর জনপ্রিয়তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর কফির উৎপাদন ব্যাহত মানেই সরবরাহ কমে যাওয়া, যা কফিপ্রেমীদের কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৭
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।