ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘ওয়ানস্টপ সার্ভিসে’ বিশ্বমানের সেবা সোহরাওয়ার্দীতে

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
‘ওয়ানস্টপ সার্ভিসে’ বিশ্বমানের সেবা সোহরাওয়ার্দীতে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিসে’ একসঙ্গে সেবা মিলছে-ছবি- রাজিন চৌধুরী

ঢাকা: হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন ডাক্তাররা। যা করতে রোগী নিয়ে ঘুরতে হয় দ্বারে দ্বারে। এ চিত্র বাংলাদেশের ছোট-বড় প্রায় সব সরকারি হাসপাতালেই। কিন্তু এ ধারণার পুরোটাই পাল্টে দিয়ে এক সহজলভ্য সেবা সৃষ্টি করেছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
 

সরেজমিন দেখা গেছে, প্যাথলজিক্যাল যতো পরীক্ষা আছে সব এক জায়গাতেই করানো হয়। এজন্য টাকাও জমা নেওয়া হয় একটি নির্দিষ্ট বুথে।

সেখানে ১০টির মতো কাউন্টারে দুপুর দু’টা পর্যন্ত টাকা জমা নেওয়া হয়। প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধার জন্য আবার রয়েছে আলাদা কাউন্টার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সেবাটির নাম দিয়েছে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’।
 
প্যাথলজিক্যাল টেস্ট ছাড়াও প্রায় সব টেস্টের ব্যবস্থাই করা হয়েছে হাসপাতালটিতে। এজন্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি।
 
‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ বুথে সব টেস্টের জন্য টাকা একসঙ্গে এক কাউন্টারেই জমা দেওয়া যায়। আর এতেই রোগীর সময়ক্ষেপণ কমে যায় কয়েকগুণ। ফলে একদিকে যেমন রোগীর কষ্ট লাঘব হয়, অন্যদিকে চিকিৎসাও ত্বরান্বিত হয়।
 
কেবল হাসপাতালের ভর্তি রোগী নন, বাইরের অন্য কোনো হাসপাতাল বা চেম্বারের রোগীও এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারেন। এজন্য চিকিৎসাপত্র দেখিয়ে আউটডোরের কাউন্টার থেকে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে আনলেই ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে যেকোনো পরীক্ষা করানো যায়।
 
অন্যদিকে কেবল দ্রুত সেবাই নয়, অনেক কম খরচে এখানে পরীক্ষা করে দেওয়া যায়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪০টিরও বেশি বিভাগের প্রতিদিন কয়েকশ’ রোগী বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করান এ সেবার মাধ্যমে।

পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
 
এই ওয়ানস্টপ সার্ভিস ব্যবস্থায় শুধু যে রোগী-রোগীর স্বজন খুশি তা নয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্টাফ, কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সরকারও গর্বিত। কেননা, সেবার মানের কারণে হাসপাতালটি এরইমধ্যে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ থেকেও স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্যদিকে বেড়েছে রাজস্বের পরিমাণ। অথচ কয়েক বছর আগে  ‘অনিয়মই যেন নিয়ম ছিল’ এ হাসপাতালে। এমন কোনো পর্যায় নেই, যেখানে দালালের দৌরাত্ম্য ছিল না।
 
সোমা রানী নামের এক গৃহিণী তার স্বামীকে এখানে প্রায় তিন বছর ধরে চিকিৎসা করাচ্ছেন। বাংলানিউজকে জানান, দেখতে দেখতে কতো পরিবর্তন হলো গত দুই বছরে। আগে তো টেস্ট করতে গেলেই হয়রান হতে হতো। অনেক সময় লোকজনকে টাকা দিয়েও কাজ করিয়ে নেওয়া লাগতো। কিন্তু এখন খুব কম সময়ে নিজেই সব করা যায়। কেননা, শৃঙ্খলা আসায় কোনো অনিয়ম নেই।
 
চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালের সেবার মান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু করে ২০১৫ সালে। বর্তমান পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া সে সময় নিয়োগ পেয়ে শুরু করেন পরিবর্তনের নানা কর্মযজ্ঞ। আপাদমস্তক একজন রোগীবান্ধব এ পরিচালকের একান্ত চিন্তার কারণেই প্রতিটি ধাপেই উন্নতি হচ্ছে।
 
উত্তম কুমার বড়ুয়া এ ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ ব্যবস্থার কার্যকারিতা তুলে ধরতে গিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ১২ মাসে আমাদের যে রাজস্ব এসেছে, তার সম পরিমাণ এসেছে গত তিনমাসেই। গত ১ এপ্রিলে এ সেবা চালুর পর ৩ কোটির বেশি টাকা আয় হয়েছে। অথচ এ সেবা চালুর আগের এক বছরে একই পরিমাণ টাকা আয় হয়েছে। কাজেই সেবার মান বাড়ায় রাজস্বও বেড়েছে।
 
ওয়ানস্টপ সার্ভিস শাখার হিসাব থেকে জানা যায়, গড়ে দৈনিক ৫শ’ থেকে ৬শ’ রোগীর ৮শ’ থেকে ৯শ’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় এখানে। সেবার মান বাড়ায় দিন দিন রোগীর চাপও বাড়ছে।
 
এ বিষয়ে উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি খরচে আমরা প্রাইভেট হাসপাতালের মতো ব্যবস্থা করেছি। আর চিকিৎসাও দিচ্ছি উন্নতমানের। তবে এটা কেবল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য রোগী এবং রোগীর স্বজনদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তারা শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চান না। অথচ একই ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালে গেলে রাও করেন না। আর সরকারি হাসপাতালে এসে স্টাফদের সঙ্গে মারামারিতেও লিপ্ত হন। এজন্য তাদের এগিয়ে আসাটাও জরুরি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।