ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শঙ্কা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ওষুধ শিল্প

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৮
শঙ্কা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ওষুধ শিল্প প্রতীকী ছবি

ঢাকা: সম্প্রতি ওষুধ শিল্পকে ২০১৮ সালের বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পণ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই শিল্পটি দেশের চাহিদা সম্পূর্ণরূপে মিটিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে বৈদেশিক বাজারেও স্থান করে নিচ্ছে।

ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত ব্যবসায়ী নেতা ও দিক নির্দেশকরা আশা করছেন অদূর ভবিষ্যতে গার্মেন্টস শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে ওষুধ শিল্প। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের শঙ্কার আলামত দেখছেন এইসব ব্যবসায়ী নেতা ও দিক নির্দেশকরা।


 
বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পরিদর্শনকৃত কারখানার প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে ২০১২ সালে কারখানার সংখ্যা ছিল ৭৮৭টি। ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৪৮১ টিতে। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথিক ২৬৬টি, ইউনানী ২৬৭টি, আয়ুর্বেদিক ২০৭টি, হোমিওপ্যাথিক ৭৯টি ও হার্বাল ৩২টিসহ মোট ৮৫১টি অনুমোদিত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ৫৪টি প্রতিষ্ঠান ওষুধ রপ্তানির মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করছে।
 
এদিকে আশঙ্কার সবচেয়ে বড় বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ৫৪টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানি ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) স্বীকৃতি পাচ্ছে। ফলে দেশের বাজারে এ কোম্পানিগুলোই বাজার দখল করে নিচ্ছে। বাকি কোম্পানিগুলো মানসম্মত ওষুধ প্রস্তুত করেও বাজার চাহিদানুসারে বাজারে জায়গা দখল করতে পারছে না। অথচ এই ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানির এফডিএ ও ডব্লিউএইচও বা হু সনদ কাজে লাগছে শুধুমাত্র ওষুধ রপ্তানির খাতিরে। কিন্তু প্রভাবটা অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়ছে।
 
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে মান রক্ষা করে ওষুধ বানাচ্ছে যে সব কোম্পানি তার বেশিরভাগই গুণগত মান রক্ষা করছে কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে কোনো ডকুমেন্টেশন নেই। ডকুমেন্টেশন আছে শুধু রপ্তানিকারক ও প্রথম সারির কয়েকটি কোম্পানির ক্ষেত্রে। এখন এ কোম্পানিগুলো এভাবে বিশেষায়িত হয়ে গেলে অন্যান্য কোম্পানিগুলো তো আর বাজারে দাঁড়াতেই পারবে না। তখন এ শিল্পের ধ্বংস ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না। কারণ এখন আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারছি শুধুমাত্র কোম্পানিগুলোর সংখ্যা বেশি থাকার কারণে। এ কারণে রপ্তানিকারক কোম্পানি আর অন্যান্য কোম্পানিদের একটা তালিকা করে জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিৎ। আর এই ডকুমেন্টেশন রাতারাতি করা সম্ভব না। এর জন্য অনেক সময়ও লাগবে। তাই সরকারের এখনই এ শিল্পকে রক্ষার তাগিদে কাজে নামা উচিৎ। নইলে অদূর ভবিষ্যতে এ শিল্পকে বর্তমান অবস্থায় দেখা একেবারে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কেননা কোম্পানিগুলো নিজেরাও নিজেদের প্রচারণার কাজ করতে পারছে না নিয়মানুসারে।
 
এ বিষয়ের পাশাপাশি ড্রাগ টেস্টিং-এর ব্যাপারেও সরকারকে আরও সহযোগী হবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ওষুধ ব্যবসায়ীরা। ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার দুর্বলতার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে বলে তাদের মন্তব্য।
 
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট সালমান এফ রহমান বলেন, আমি ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। তখন থেকেই একটা বিষয় দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করে এসেছি ড্রাগ টেস্টিং-এর উপর সরকারের দুর্বলতা। আমি নিজে দেখেছি ফার্মাসিউটিক্যালসগুলো যে স্যাম্পল নিয়ে যাচ্ছে তা কোনোভাবে দেখে ফার্মার পক্ষেই একটা রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই যে যার যার মত খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে পণ্য ছেড়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাব ঢাকায় ছিল না। আর এ কারণেই প্যারাসিটামল খেয়ে শিশুরা মারা যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন ঢাকায় ল্যাব হয়েছে ও এর অবস্থা খুবই ভালো বলেই আজ আইএসও সনদ পাচ্ছে।

আর এজন্যই মান নিয়ন্ত্রণ করে দেশের বাইরেও যাচ্ছে ওষুধ। তবে আরও উন্নতকল্পে বা ডব্লিউএইচও-এর সনদ পেতে আরও জনবল প্রয়োজন। না হলে সম্ভব নয়। কারণ জনবলও গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি শর্ত। এ ব্যাপারে সরকার আরও সুনজর দেবে বলে আমি আশা করি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৮
এমএএম/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।