ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হেপাটাইটিস-বি প্রতি মিনিটে কেড়ে নেয় দুটি জীবন

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১
হেপাটাইটিস-বি প্রতি মিনিটে কেড়ে নেয় দুটি জীবন

‘হেপাটাইটিস বি’ বিশ্বব্যাপী মারাত্মক সংক্রামক রোগের ভাইরাস হিসেবে পরিচিত। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শিশুরা ব্যাপকহারে এ রোগে আক্রান্ত হয়।

পৃথিবীতে প্রতি বছর ২ থেকে ৫ লাখ নবজাতক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয়, যারা ভবিষ্যতে এই রোগের বাহক বা ক্যারিয়ার হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫ শতাংশ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি বাহক এবং এদের ২০ শতাংশ লিভার ক্যান্সার ও সিরোসিসের কারণে মারা যেতে পারে। বাস্তবে হেপাটাইটিস-বি এইডসের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক এবং প্রতি বছর এইডসের কারণে পৃথিবীতে যত লোক মারা যায়, তারচে বেশি মারা যায় হেপাটাইটিস-বির সংক্রমণে।   নীরব ঘাতক এ সংক্রামক ব্যাধিটি প্রতি মিনিটে কেড়ে নেয় দুজন নারী-পুরুষের প্রাণ। প্রতি বছর ১০ থেকে ৩০ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হচ্ছে ।

হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস বিশ্বজুড়েই একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্যসমস্যা । এই ভাইরাস মূলত লিভারকে আক্রমণ করে। এর সংক্রমণের ফলে অন্যতম ঘাতকব্যাধি লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার হতে পারে।

রক্ত ও রক্তজাত পদার্থ মূলত এই ভাইরাসের বাহক। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ভাইরাস-আক্রান্ত রোগী সাধারণত কোনো লক্ষণ বহন করে না, অথচ এদের মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে রক্তরস, লালা, বীর্য ও বুকের দুধ এক দেহ থেকে অন্য দেহে এই ভাইরাস বিস্তারে সাহায্য করে।

সাধারণত আক্রান্ত মায়ের শিশুসন্তান, আক্রান্ত পরিবারের অন্যান্য সদস্য, বহুবার রক্ত গ্রহণকারী, মাদকাসক্ত, মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি, স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন হাসপাতাল-ক্লিনিকে কর্মরত ব্যক্তিরা (সাধারণত ডাক্তার, নার্স, ল্যাবরেটরির কর্মী, দন্ত চিকিৎসক) এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

এছাড়া যারা রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট রক্তশূন্যতার চিকিৎসায় বারবার ব্লাড ট্রান্সফিউশন করেন, সমকামী পুরুষদের মধ্যে যৌন মিলনের ফলে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত নারী-পুরুষের মধ্যে একাধিক নারী-পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ সেবন, একই নিডল ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির মাদক গ্রহণ, রোগীর দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ, স্যালাইন বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করার সময় কিংবা ল্যাবরেটরিতে রক্ত ও রোগীর দেহ থেকে সংগৃহীত তরল পদার্থ নিয়ে পরীক্ষা করার সময় অসাবধানতাবশত কিংবা হেপাটাইটিস বি সংক্রমিত রক্ত কিংবা অন্য তরলজাতীয় পদার্থ স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্তের সংস্পর্শে এলে, হেপাটাইটিস বির প্রাদুর্ভাব বেশি এমন এলাকায় ছয় মাসের বেশি অবস্থান করলে, নার্সিং হোমে দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থান করলে বা কর্মরত থাকলে আক্র্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
নবজাতকরা বাবা-মার মাধ্যমে

হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত হতে পারে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জন্মের সময় বাহক মা থেকে শিশুর মধ্যে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। এছাড়া শৈশবে ও কৈশোরে খেলাধুলার সময় আঁচড়ের মাধ্যমে বাহক শিশু থেকে সুস্থ শিশুতে এ রোগ ছড়াতে পারে । একইভাবে সুচের মাধ্যমে নাক-কান ফুটো করার মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে । আবার অশোধিত সিরিঞ্জ ও সুইয়ের মা্ধ্যমে এবং চুল কাটার সময়ও সংক্রমণ ঘটা সম্ভব।

নিচের লক্ষণগুলো দেখে এ রোগ চিহ্নিত করা যেতে পারে :
•    সাধারণত এক-তৃতীয়াংশ লোক প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেন না।
•    এক-তৃতীয়াংশ লোকের ফ্লুর মতো মাথাব্যথা, গা শিরশির ভাব এবং জ্বর হয়।
•    এক-তৃতীয়াংশ লোকের জন্ডিস, ক্ষুধামন্দা, ডায়রিয়া, বমি ও জ্বর দেখা দেয়।

সাধারণত হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই কোনো  চিকিৎসা ছাড়াই আরোগ্য লাভ করে থাকেন। পাঁচ বছর বয়সের আগে আক্রান্ত শিশুদের শতকরা ৯০ জনই লিভারের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহে ভুগতে থাকে। বয়স্কদের মধ্যে এ সংখ্যা হচ্ছে পাচ থেকে দশ ভাগ। ক্রনিক প্রদাহে আক্রান্ত রোগীদের শতকরা একজন প্রতি বছর চিকিৎসা ছাড়াই জীবাণু বিমুক্ত হয় আর শতকরা ৩০ জন লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক জটিলতায় ভুগতে থাকে। ক্রনিক হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত রোগীদের শতকরা পাঁচ থেকে দশজন লিভার ক্যান্সার বা হেপাটোসেলুলার কারসিনোমায় আক্রান্ত হন।

রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে হবে। সাধারণত রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন, হেপাটাইটিস বি আইজিএম কোর অ্যান্টিজেন, হেপাটাইটিস বি ই এন্টিজেন ও সেই সঙ্গে লিভার এনজাইমের অধিক মাত্রা নিশ্চিতভাবে হেপাটাইটিস বি-এর একিউট সংক্রমণের কথা জানান দেয়। ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেনের দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি, হেপাটাইটিস বি কোর আইজিজি (ওমএ) অ্যান্টিজেন, হেপাটাইটিস ই এন্টিজেন ও লিভার এনজাইম পরীক্ষা জরুরি। সময়ের ব্যবধানে বি ভাইরাস দেহ থেকে নিঃসৃত হয়ে গেলে রক্তে হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেনের মাত্রা হ্রাস পেয়ে এক সময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে এবং ভবিষ্যতের জন্য হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধক হেপাটাইটিস বি কোর এন্টিবডি ও বি সারফেস অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব :
•    ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা।
•    ইনজেকশন ব্যবহারের সময় ডিসপোসিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।
•    দাঁতের চিকিৎসার সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া।
•    রোগের বিরুদ্ধে নিজের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্‌হা গড়ে তোলা । হেপাটাইটিস বি-র টিকা ৪টি ডোজ নেওয়া। প্রথম তিনটি ১ মাস পর পর এবং চতুর্থ ডোজটি প্রথম ডোজের ১ বছর পর নিতে হয়।

এ রোগের ভয়াবহতার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব নবজাতককে হেপাটাইটিস বির টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে ৮০টির বেশি দেশ টিকা দেওয়ার সম্প্রসারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও সব শিশুকে হেপাটাইটিস বি টিকা দেওয়ার জন্য একে ইপিআই ভ্যাক্সিন কার্যক্রমের অর্ন্তভুক্ত করেছে। এ টিকা যে কোনো বয়সে যে কোনো দিন নেওয়া যায়। শতকরা নব্বই ভাগ মানুষের শরীরে এই ভ্যাক্সিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে ।

সূত্র : স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট
 
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৫৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।