ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পরোক্ষ ধূমপানে বাড়ছে অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৬ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৮
পরোক্ষ ধূমপানে বাড়ছে অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগী। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: অনেকেরই ধারণা প্রত্যক্ষ ধূমপানই কেবল ক্ষতিকর, পরোক্ষ ধূমপান তেমন ক্ষতি করে না। আসলে এ ধারণা মোটেও সত্য নয়। প্রত্যক্ষ ধূমপানের মতো পরোক্ষ ধূমপানও সমান ক্ষতিকর। 

তামাকবিরোধী সংগঠন ‘প্রজ্ঞা’ ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স ‘আত্মা’র সহযোগী সংগঠন রাজশাহী এসিডির কো-অর্ডিনেটর এহসানুল আমিন ইমন বলেন, সরাসরি ধূমপানের মতো পরোক্ষ ধূমপানও যে ক্ষতিকর এ বিষয়টি সবাইকে বুঝতে হবে। ধূমপান একটি মারাত্মক বদভ্যাস।

এর কোনো উপকারিতা কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে রাজশাহীতে আশঙ্কাজনকভাবে অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) জনবহুল এলাকাগুলো ধূমপান মুক্ত করতে এরইমধ্যে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মেয়রও এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।
বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, রাজশাহী।  ছবি: বাংলানিউজ
রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সঙ্গে এক আলোচনায় এহসানুল আমিনকে জানানো হয়, সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত পণ্যের কোনো দোকান থাকবে না। উন্মুক্তভাবে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিরুৎসাহিত করতে এ বিষয়ে রাসিক প্রদত্ত ট্রেড লাইসেন্সে সচেতনতামূলক শ্লোগান ব্যবহারের করা হবে।  

কেবল তাই নয়, তামাকমুক্ত রাজশাহী মহানগরী গড়ে তুলতে সিটি করপোরেশনের করণীয় বিষয়ে গাইডলাইন সংশোধনে স্থায়ী কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এসিডির এই কর্মকর্তা।  

জানা যায়, সর্বশেষ সংশোধিত আইনের আলোকে পরোক্ষ ধূমপানের ব্যাপারে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০১৫ পাস হয়েছে। সংশোধিত আইন ২০১৩ ও বিধিমালা ২০১৫-তে নারী-শিশুসহ সব অধূমপায়ীকে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার থেকে রক্ষায় কঠোর বিধান রাখা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘পাবলিক প্লেস’ ও ‘পাবলিক পরিবহনে’ ধূমপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের ১৯২টি দেশে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের (পরোক্ষ ধূমপান) প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ মানুষ মারা যায়। এরমধ্যে এক লাখ ৬৫ হাজারই শিশু।  

২০১০ সালে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও যক্ষ্মাসহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত বহু রোগ দেখা দেয়। প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়, পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় শিশু ও নারীর দেহে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে গোটা বিশ্বে প্রতিবছর কেবল নারী মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮১ হাজার।  

এ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার যে, রাজশাহীসহ গোটা দেশেই ধূমপায়ীদের পাশাপাশি অধূমপায়ীরাও রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর থেকে ২০১৬-২০১৭ সাল এবং চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পাওয়া অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত দুই বছরে রাজশাহী বিভাগে এ বিষয়ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন হাজার।  

২০১৬ সালে বিভাগে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৮২৩ জন। অন্যদিকে, ২০১৭ সাল ও ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাস মিলিয়ে রাজশাহী বিভাগে অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ৬১৩ জন। যা ২০১৬ সালের তুলনায় এক হাজার ৭৯০ জন বেশি। তাছাড়া এখন অ্যাজমা রোগী শনাক্তের হার প্রতি লাখে ১১০ জন। আগে এ সংখ্যাটা ছিল ১০১।

২০১৭ সালে বিভাগে ১২ হাজার ৮১৯ যক্ষ্মা রোগের জীবাণুযুক্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ সংখ্যা ২০১৬ তুলনায় এক হাজার ৩৭৯ জন বেশি। এছাড়া বিভাগে প্রতি লাখে জীবাণুযুক্ত নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের হার পূর্বের (২০১৬ সাল) ৫৯ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে।  
অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগী।  ছবি: বাংলানিউজ
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে অ্যাজমা ও যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়লেও একটি বড় অংশ এখনও শনাক্তের বাইরে রয়েছে। বিশেষ করে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত না হওয়া খুবই উদ্বেগজনক। কারণ শনাক্ত না হওয়া রোগীদের হাঁচি, কাশি ও ব্যবহৃত জিনিস দ্বারা এর জীবাণু অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

তিনি বলেন, দারিদ্র, ঘনবসতি, তামাকের ব্যবহার বৃদ্ধি, অপুষ্টি এসব অ্যাজমা ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসবেরমধ্যে দারিদ্র্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ধূমপানের ব্যবহার বাড়ছে। প্রত্যক্ষ ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপান এ রোগের পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।  

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন না হওয়া পর্যন্ত এই রোগের বাড়ার হারা কমানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি বলে দাবি করেন বক্ষব্যাধী হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আমীর হোসেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৮
এসএস/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।