ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রমজানে ত্রিমুখী চেষ্টায় ইফতার হবে নিরাপদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৮
রমজানে ত্রিমুখী চেষ্টায় ইফতার হবে নিরাপদ বক্তব্য রাখছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ভোক্তা, সরবরাহকারী ও ভেজাল-দূষণরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের কঠোর নজরদারির মাধ্যমেই আসন্ন রমজানে নিরাপদ ইফতারের প্রত্যাশা করছেন নিরাপদ খাদ্য অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নিরাপদ ইফতার পেতে ভোক্তাকে আগে সচেতন হতে হবে। বিক্রেতাদেরও নিরাপদ ইফতার সরবরাহের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি ভেজাল নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।

ত্রিমুখী চেষ্টার ফলেই রমজানে নিরাপদ ইফতার পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা।

বুধবার (১৬ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নেটওয়ার্ক (বিএফএসএন) আয়োজিত ‘রমজানে নিরাপদ খাদ্যের আলোকে ইফতার’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।  

সেমিনারে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, বিসেফ ফাউন্ডেশনের সিইও আনোয়ার ফারুক ও বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রিন্সিপাল অ্যান্ড হেড অব নিউট্রিশন বিভাগের শাসসুন নাহার নাহিদ, এফএও ফুড সেফটি প্রোগামের সিনিয়র ন্যাশনাল অ্যাডভাইজার প্রফেসর শাহ মুনির হোসেনসহ প্রমুখ।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, উৎপাদন থেকে বিপণন ও খাবার টেবিল পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে পার্শ্ববর্তী দেশের আইনের আলোকে খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিদেশে এই আইনের বাস্তবায়নে সাত থেকে আট বছর সময় লেগেছে। এ আইন দেশে বাস্তবায়ন হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে বিদেশের চাইতে কম সময়ে এই আইনের বাস্তবায়ন করতে পারবো। ’

তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই রাস্তা বা বাইর খাবারও স্বাস্থ্যসম্মত হবে। বাড়ির খাবারও নিরাপদ হতে হবে। ভোক্তার সচেতনতার পাশপাশি বিক্রেতাদেরও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। যে খাবার আপনার পরিবারকে দিতে পারবেন না, সেটা কেন অন্যকে খাওয়াবেন? সঠিক পথে আসুন না এলে শাস্তির বিধানে নামবো। ’

শাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেবল রমজানেই নয়, সারাবছরই খাদ্যের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। বাইরের ও ঘরের খাবারকেও নিরাপদ করতে হবে। আপনি ঘরে যে খাবার খান, সেটা নিরাপদ তো? বাসায় কাজের মেয়ে ঠিকমতো হাত ধুয়ে খাবার প্রস্তুত করে কিনা? খাবারের টেবিল পরিষ্কার কিনা এসব বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। রেস্তোরাঁ মালিকদের একা সচেতন হলেই হবে না, সবাই সচেতন হলেই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। ’

ভেজাল ও দূষণরোধে নানামুখী কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক বলেন, ‘খাদ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে জোর চেষ্টার অংশ হিসেবে রমজানের আগেই ভেজাল ও দূষণরোধে অভিযান চলছে। শাস্তির আওতায়ও আনা হচ্ছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁর খাবারের মান যাচাইয়ে প্রফেশনাল অডিটর দিয়ে অডিট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী লাল-নীল ও হদুল রঙ নির্দেশনা দিয়ে ঝুঁকির বিষয়ে জনগণকে জানানো হবে। কাঁচাবাজার ও কসাইখানা খাদ্য দূষণের বড় জায়গা। রমজানে বড় ঝুঁকি হচ্ছে পানি। জারের পানিতে জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। এই বিষয়ে ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বরফকলেও দূষণ নিয়ে অভিযান চলছে।

নিউট্রিশন বিভাগের শাসসুন নাহার নাহিদ বলেন, ‘রমজানে ভেজাল খাদ্য বাজারে বেশিই আসে। একই তেল একাধিকবার ব্যবহার করায় এসিডিটি বেড়ে যায়। এতে হৃদরোগে ঝুঁকি বাড়ে। খাবারে রঙ ব্যবহারের কারণে আলসারসহ বিভিন্ন রোগ বাড়ে। খাদ্যের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করলে দোকান বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। যাতে অন্যরাও সচেতন হয়। রমজানে প্রতিটি ইফতার হতে হবে হোমবেজড। ’

শাহ মুনির হোসেন বলেন, ‘ইফতার ও সেহরিতে আমাদের তৈলাক্ত খাবার বর্জন করে চিড়া, মুড়িসহ শুকনা খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। অবিশুদ্ধ খাবার গ্রহণে রোজায় ফুড পয়জনিং রোগীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। কিন্তু ইসলামের আলোকে যদি আমরা খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও সংযমের অভ্যাস চালু করি তাহলে আমরা বেশি সুস্থ থাকবো। মনে রাখতে হবে আমাদের সেফ নিউট্রিশাস ফুড গ্রহণের মাধ্যমে নিজের আয়ুষ্কালকে সুস্থ রাখতে হবে।

এ সময় বক্তারা স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থান ও পরীক্ষিত মানের বিশুদ্ধ খাবার পরিবেশনের নিশ্চয়তার আশায় সরকারি পদক্ষেপের আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৮
এমএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।