ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ভোক্তা প্রতারণার 'পক্ষে' নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
ভোক্তা প্রতারণার 'পক্ষে' নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ! ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্নতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, এমন অভিযোগ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নেতাদের। 

তারা বলছেন, ইথোফেন-কার্বাইডের মাধ্যমে অপরিপক্ব ফল পাকানোর মাধ্যমে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। এভাবে ফলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় এবং তা বিষাক্ত হয়ে যায়।

আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এই স্বেচ্ছাচারিতার পক্ষে কথা বলে সাধারণ ভোক্তাদের ক্ষতি করছেন।  

মঙ্গলবার (২৯ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পবা আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্নতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত বুধবার (২৩ মে) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএসএফএ) 'মৌসুমি ফল পাকাতে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার ও জনস্বাস্থ্য' শীর্ষক কর্মশালায় ভোক্তাদের বিপক্ষে ও অসাধু ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। কর্মশালায় বিএসএফএ'র চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিত করেছেন যে, কার্বাইড বা ইথোফেন দিয়ে ফল পাকানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। আর ফরমালিন দিয়ে অতীতে যেসব কর্মকাণ্ড হয়েছে তা পুরোটাই ভুল।  

‘কিন্তু আমরা মনে করি তার বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক মহা বিপর্যয়ের অশনি সংকেত। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর পঞ্চম অধ্যায় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিধিনিষেধের ২৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে - কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা উপাদান (যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, সোডিয়াম সাইক্লোমেট) ব্যবহার করে বিক্রয় বা বিপণন করতে পারবেন না’।  

এ ধারার আলোকে ইথোফেনের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে বক্তারা বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা কার্বাইড সাধারণত গ্যাস ওয়েল্ডিং-এর কাজে ব্যবহৃত হয়। কার্বাইডে অল্প পরিমাণ আর্সেনিক ও ফসফরাস যৌগ থাকে। দুটোই মানবদেহে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। এছাড়া কার্বাইড একটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী (কার্সিনোজেন) উপাদান। তাছাড়া এভাবে পাকানো ফলে পুষ্টিগুণ অনুপস্থিত থাকে। আর ইথোফেন ইথাইলিন গ্যাস তৈরিতে ব্যবহার হয়। এটি কিছু প্রজাতির ফল পাকানো তরান্বিত করে। এটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হলে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এটা ব্যবহারের জন্য ইথাইলিন সেন্সর প্রয়োজন। কিন্তু এদেশের কোথাও তা ব্যবহার হচ্ছে না।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাছের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সমন্বয়ক ডা. লেলিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি অনুষদের সাবেক ডিন আ ব ম ফারুকসহ প্রমুখ।  

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ ভঙ্গ করেছে, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও অবমাননা করেছে, এমনকি ইথিফোন ও কার্বাইড সম্পর্কে ভুল বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে চলতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে জনসাধারণকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছেন উল্লেখ করে বক্তারা বেশকিছু সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন।

সুপারিশগুলো হলো- বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ, কী কারণে তিনি এমন অযৌক্তিক ও আইন বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তা তদন্ত, মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পুনর্বহাল ও বর্ধন এবং নিরাপদ খাদ্য আইন অতি দ্রুত বাস্তবায়ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৮
এমএএম/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।