ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রক্তদাতার সন্ধান দেবে ‘ব্লাড ম্যানেজার’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৫ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৮
রক্তদাতার সন্ধান দেবে ‘ব্লাড ম্যানেজার’ ‘ব্লাড ম্যানেজার’ অ্যাপস

একজন মুমূর্ষু রোগীর জন্য জরুরি রক্তের প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ ‘এ নেগেটিভ’। রোগীর স্বজনরা খুঁজছে রক্তদাতাকে। কিন্তু কোথাও মিলছে না 'এ নেগেটিভ' গ্রুপের রক্তদাতা। একটা সময় রক্তের অভাবে মুমূর্ষু রোগীটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

আমাদের দেশে অসংখ্য মুমূর্ষু রোগী প্রায় সময় জরুরি প্রয়োজনে রক্ত না পেয়ে মারা যায়। এর মূল কারণ জরুরি প্রয়োজনে রক্তদাতার সন্ধান সহজে না পাওয়া।

তাই যেকোনো গ্রুপের রক্তের সন্ধান পেতে সাহায্য করবে ‘ব্লাড ম্যানেজার’।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রক্তদান কার্যক্রমকে আরও সহজ করতে সম্প্রতি ‘ব্লাড ম্যানেজার’ নামে একটি ডিজিটাল অ্যাপস চালু করেছে বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরাম নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী রক্তাদাতা সংগঠন।

যেখানে খুব সহজেই সারাদেশের রক্তদাতার সন্ধান মিলবে। অ্যাপসটিতে সারা দেশের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। অর্থাৎ যার জেলায় রক্তের প্রয়োজন হবে অ্যাপসের মাধ্যমে রক্ত গ্রহিতারা সেই জেলায় স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে রক্তদাতার সন্ধান পেয়ে যাবেন।

এছাড়া সরাসরি অ্যাপস থেকে সার্চ করে যেকোনো গ্রুপের রক্তদাতা খুঁজে নেওয়া যাবে। অ্যাপসে রক্তদাতারা নিজের ছবিসহ নিবন্ধন করে সহজেই রক্তদান কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। অ্যাপসের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে নিবন্ধিত রক্তদাতাদের ৪ মাস পরপর রক্তদানের সময় অটো গ্রিন সিগন্যাল কালারের মাধ্যমে মনে করিয়ে দেবে তিনি রক্ত দিতে পারবেন। যাদের ৪ মাস সময় হয়নি তাদের লাল কালার সিগন্যাল দিয়ে মনে করাবে তার এখনো রক্তদানের ৪ মাস হয়নি।

অ্যাপসের মাধ্যমে মেডিকেল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিনামূল্যে চিকিৎসা নেওয়া যাবে। রক্তদানের সচেতনতা ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তরিত তথ্যও জানা যাবে। রক্তদান কেন্দ্রিক এ ধরনের ব্যতিক্রমী অ্যাপস বাংলাদেশে প্রথম।

বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়ের সিজার অপারেশনের জন্য বিরল ‘এ নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন হয়। সেই রক্তের জন্য হন্যে হয়ে রক্তদাতা খুঁজেছি আমরা। বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক আর মেডিকেলগুলোতে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

এদিকে ডাক্তার জানালেন, দ্রুত সিজার করতে না পারলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এরপর দিশেহারা হয়ে সবাইকে ফোন দেওয়া শুরু করলাম। রক্তের প্রয়োজন নিয়ে পোস্ট করলাম ফেসবুকেও। আমার এক বন্ধু মেহেদী এ ধরনের সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে এক ব্যাগ ‘এ নেগেটিভ’ রক্তদাতা খুঁজে দেন। এত দ্রুত রক্তদাতা খুঁজে পেয়ে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আজ থেকে রক্তের প্রয়োজনে মানুষকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবো। সেই অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি চিন্তা করি কিভাবে দেশের সব স্বেচ্ছাসেবক ও রক্তদাতাদের একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসা যায়। যাতে দেশের যেকোনো প্রান্তে খুব দ্রুত রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়। এ চিন্তা থেকে ফেসবুকে বিভিন্ন জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলি। জেনে নিই, কে কিভাবে কাজ করছে। বুঝতে পারলাম বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কাজ করছে নিজ জেলা বা উপজেলায়। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সারাদেশে ছড়িয়ে দেব বাংলাদেশ ব্লাড ডোনারস ফোরামের কার্যক্রম।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কামরুল বলেন, ‘সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় কার্যকরী টিম গঠন করে রক্তদানের এ সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রক্তদাতাদের আরও উৎসাহিত করতে পর্যায়ক্রমে সংবর্ধনার আয়োজন করতে চাই। রক্তদাতার সন্ধান দিতে শিগগিরই কল সেন্টার চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে। সারাদেশের রক্তদাতাদের আমাদের ‘ব্লাড ম্যানেজার’ অ্যাপসের আওতায় আনতে ৫০ হাজার স্টিকার করার উদ্যোগ নিয়েছি। রক্তের অভাবে যাতে একটি রোগীর মৃত্যু না হয় সেই স্বপ্ন দেখছি। একদিন আমাদের এ প্রজন্মই রক্ত সংকটের সমাধান করবে। ’ 

অ্যাপসটি গুগল প্লে-স্টোরে গিয়ে ‘blood manager’ লিখে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৮
আরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।