ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আইসিডিডিআর,বি’তে দান করলে আয়কর মওকুফের সুযোগ

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৮
আইসিডিডিআর,বি’তে দান করলে আয়কর মওকুফের সুযোগ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের চিকিৎসায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল পরিচালনা করে ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ’ (আইসিডিডিআর,বি)। রাজধানীর মহাখালী ও চাঁদপুরের মতলবে প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধানে দু’টি হাসপাতালে চিকিৎসা  দেওয়া হয় রোগীদের।

এই দুই হাসপাতালে প্রতিবছর গড়ে দুই লাখের বেশি গরিব রোগী পায় বিনামূল্যে চিকিৎসা। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু।

আর এই চিকিৎসা দিতে বছরে তাদের ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তহবিল না থাকায় এগুলো চালাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

ডায়রিয়া রোগীদের জন্য এই বিশেষ সেবা অব্যাহত রাখতে দেশের আগ্রহী অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ। আর কেউ দান করলে তার জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা।

আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা যায়, ডায়রিয়াজাতীয় রোগের চিকিৎসায় বিশ্বের একমাত্র বিশেয়ায়িত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এটি। বিগত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা ও মতলব হাসপাতালে কলেরা, রোটা ভাইরাস এবং শিগেলোসিসের মতো ডায়রিয়া জাতীয় রোগের বিশেষায়িত সেবা দিয়ে আসছে। সারাবছর ধরে সেবা অব্যাহত রাখতে জরুরি অর্থের প্রয়োজন হয়।

বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের আগে ও পরে, যখন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। যখন প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন অতিরিক্ত রোগীর জন্য নতুন কলেরা খাট, সিরাপথে প্রয়োগযোগ্য বাড়তি স্যালাইন, ওআরএস, জিংক ট্যাবলেট, চালের গুঁড়ার স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োজন হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ডাক্তার, নার্স স্বাস্থ্যকর্মীতো লাগেই। যার জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশপাশি তীব্র নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের আক্রমণে আক্রান্ত অত্যন্ত অসুস্থ রোগীদের জন্য ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে হাসপাতালে। এছাড়া রয়েছে তীব্র অপুষ্টির শিকার শিশুদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, মা ও শিশুর লং স্টে ওয়ার্ড। দক্ষতার সঙ্গে এসব পরিচালনার জন্য রয়েছেন ৬৫ জন ডাক্তার, ১১০ জন নার্স ও ২৫১ জন সহায়ক কর্মী।

এছাড়া সম্প্রতি ঢাকায়ও ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। এ বছরের মার্চ থেকে মে সময়কালে আইসিডিডিআর,বি-তে ৫৫ হাজার ২২২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। যা ২০০৭ সালের পর গড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী এবং সাধারণ ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু আইসিডিডিআর,বি ঢাকা হাসপাতালের কর্মীরা এর 'কোনো রোগীকে ফিরিয়ে না দেওয়ার' আদর্শে অবিচল থাকেন। তারা বাড়তি সময় কাজ করেও উচ্চ মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা বজায় রাখেন।

৩০০ শয্যাসম্পন্ন এ হাসপাতালে রোগী বাড়লে প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত শয্যা যুক্ত করা হয়। সরকারি হাসপাতালের মতো এখন থেকেও কোনো রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।

এদিকে, আইসিডিডিআর,বি'তে স্বতন্ত্রভাবে ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অর্থ যোগানের সুবিধা ছাড়াও রয়েছে আয়কর মওকুফের সুবিধা। এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দান করলে সরকারের ১০ শতাংশ আয়কর রেয়াতের সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে (http://donate.icddrb.org/tax_benefit) ওয়েবসাইটটি ভিজিট করা যেতে পারে।   

এ প্রসঙ্গে ঢাকার মহাখালী আইসিডিডিআর,বি’র চিফ ফিজিশিয়ান ডা. আজাহারুল ইসলাম খান জানান, আমাদের সর্বাধুনিক গবেষণার মাধ্যমে বার্ষিক ২ লাখ রোগীর সংগৃহীত উপাত্ত ব্যবহার করে বৈশ্বিক জীবন রক্ষাকারী সমাধান বের করি। আমাদের বিভিন্ন আবিষ্কার বিশেষ করে ওআরএস এ পর্যন্ত পাঁচ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। আইসিডিডিআরবি,র বিনামূল্যে এসব সেবা না পেলে কলেরা ও ডায়রিয়াজনিত কারণে অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হতো।

এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি’র পরিচালক (কমিউনিকেশন) ক্যাথরিন স্পেন্সার বাংলানিউজকে বলেন, আইসিডিডিআর,বি মূলতো একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটি ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীদের মহাখালী ও মতলব হাসপাতালের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এই চিকিৎসাব্যয় নির্বাহ হয় ব্যক্তি পর্যায়ের অনুদান, কিছু বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে এবং প্রধান প্রধান দাতাদের অর্থয়নে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, ওষুধের দাম বৃদ্ধি, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ডোনারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হাসপাতাল পরিচালনায় অর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি হাসপাতালের বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে এবং অসংখ্য রোগীর জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের প্রতি আর্থিক সাহায্যের অনুরোধ জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৮
এমএএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।