ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফুটবে হাসি গ্যাস্ট্রোলিভার রোগীর মুখে

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮
ফুটবে হাসি গ্যাস্ট্রোলিভার রোগীর মুখে

ঢাকা: জলবায়ু ও পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনালজনিত রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। দেশে এ ধরনের রোগী সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র। গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনালজনিত রোগকে পুঁজি করে বেশিরভাগ ওষুধ কোম্পানি বাজারজাত করছে বিভিন্ন নামের ওষুধ। রোগের অবস্থা না বুঝে রোগীরা এসব ওষুধ গ্রহণের ফলে ঘটছে হিতে বিপরীত। 

নিয়মানুসারে বা ফুল কোর্স ওষুধ শেষ না করা ও রোগের অবস্থা অনুসারে ওষুধ না গ্রহণের ফলে ওষুধগুলো রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই রোগও সারছে না কেবল ওষুধ কোম্পানিগুলোর মুনাফা হচ্ছে।

এতে রোগীর হরমোনাল বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা একেবারে নেমে আসছে। এ কারণে অন্যান্য রোগও বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।

পরিতাপের বিষয়, রোগী আর ওষুধের আধিক্য থাকলেও নেই বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় এনে সরকার পরিপাকতন্ত্র, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল রোগে আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীর মহাখালীতে ‘২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিজেস রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল’ নির্মাণ হচ্ছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ২০১১ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০১৯ সালের জুনে।

দেশের কয়েকটি মেডিকেল কলেজে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ও আন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের এক-তৃতীয়াংশই পরিপাকতন্ত্র ও লিভারের রোগে আক্রান্ত।

যদিও দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ বিষয়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতার তুলনায় বিদ্যমান ক্রমবর্ধমান রোগীর বেশি হওয়ায় বিস্তৃত হচ্ছে না এই জটিল রোগের চিকিৎসা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর প্রভাবের কারণেই সারাবিশ্বে গ্যাস্ট্রোলিভার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে রয়েছে আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ- ভেজাল খাদ্য বা অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক পদার্থযুক্ত খাদ্য। রোগটির প্রকোপ অনুসারে উন্নত বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনগণের জন্য কমপক্ষে একজন গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশে প্রতি ৩০ লাখ লোকের জন্য রয়েছেন একজন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বারডেম হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া আরও দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সীমিত সংখ্যক আসনে এ বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি ১১টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ বিভাগ স্থাপন এবং চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পদ সৃষ্টি হলেও একাডেমিক কোর্স চালু করা সম্ভব হয়নি। এর মূল কারণ জনবল সংকট।

এসব দিক বিবেচনা করে রোগীদের সেবার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিস্ট তৈরি এবং গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিজেস রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল চালু হবে।

রাজধানীর মহাখালীতে ২ একর জমির ওপর ১০তলা মূল হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। এরই মধ্যে আসবাবপত্র এবং যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে স্থাপনের কাজ চলছে। হাসপাতালটির জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ ৩৬৩ জন জনবল নিয়োগের অনুমোদনও পাওয়া গেছে।

হাসপাতাল প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালটিতে ইমার্জেন্সি অ্যান্ডোসকপিক ইন্টারভেনশন, ইমার্জেন্সি সার্জিক্যাল কেয়ার এবং ১২ বেডের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডসহ গ্যাস্ট্রো ইনটেসটাইনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিসের সুবিধা থাকবে। এছাড়া বহির্বিভাগে পরিপাকতন্ত্র, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল রোগের মেডিক্যাল এবং সার্জিক্যাল কনসালটেশন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। রোগ নির্ণয়ে রোগীদের সুবিধার্থে এখানে থাকবে আধুনিক এআরই ব্যবস্থা, ১৬০ স্লাইস সিটি স্ক্যানসহ অন্যান্য গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল ইমেজিং ব্যবস্থাসহ রোগ নির্ণয়ে অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সুসজ্জিত ল্যাব।

গোলাম কিবরিয়া বলেন, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় রয়েছে প্রস্তুতি কক্ষ, চারটি প্রসিডিউর কক্ষ, রিকভারি কক্ষ এবং সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সংবলিত অ্যান্ডোসকপি স্যুট, অ্যান্ডোসকপি ট্রেনিং ল্যাব। হাসপাতালে থাকবে চারটি অপারেশন থিয়েটার, ৮ বেডের আইসিইউ, ১২ বেডের এইচডিইউ, ১২টি ওয়ার্ড, ৩০টি কেবিন, মরদেহ সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও বেজমেন্ট পার্কিং সুবিধা। এছাড়া পাঁচতলা ভবনগুলোয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হোস্টেল, ডক্টরস ডরমেটরি, নার্সেস হোস্টেল ও ইমার্জেন্সি স্টাফ কোয়াটার করা হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ডাইজেস্টিভ ডিজিজেস রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল প্রকল্পটি শেষের পথে। ২১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ প্রকল্পে কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের অক্টোবরে এবং এটি হস্তান্তর করা হবে ২০১৯ সালের জুনে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহে নির্মিত হচ্ছে। হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হলে দেশের মানুষ স্বল্পব্যয়ে পরিপাকতন্ত্র, লিভার এবং প্যানক্রিয়াস সংক্রান্ত জটিল রোগগুলোর উন্নত চিকিৎসা পাবে। পাশাপাশি এখানে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হবে। এর মাধ্যমে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা সম্ভব হবে। রোগ সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা মাধ্যমে চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট, নার্সদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা হবে। যা সারা দেশের ইন্টেসটাইনালজনিত রোগীদের সেবাকে উন্নত করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮
এমএএম/এএটি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।