ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কমছে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা, বাড়ছে হুমকি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
কমছে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা, বাড়ছে হুমকি বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠান

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রায় ৬০ শতাংশের অধিক মানুষ অসচেতনভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করে। ফলে অধিকাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে বা রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বা জনস্বাস্থ্যে বিশাল হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর সাসাকাওয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞরা।  

আইসিডিডিআরবি এবং যুক্তরাজ্যের গবেষণা সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের (লাফবোরো ইউনিভার্সিটি, ডারহাম ইউনিভার্সিটি, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি) কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রকাশের লক্ষ্যে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

বক্তারা বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স বিশ্ববাসীর জন্য একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। বৃহৎ পরিসরে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের ব্যবহার (বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক) অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে ত্বরান্বিত করছে। যখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক যা পূর্বে বিশেষ কোনো রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল, কিন্তু এখন তা আর কাজ করছে না, তখন তাকে বলা হচ্ছে অ্যান্টিমাইক্রবিয়াল রেজিস্ট্যান্স। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে অত্যাবশ্যক কিন্তু অনেক ব্যাকটেরিয়াই এখন অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে উঠছে।

বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্পর্কিত গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে অসুস্থতার সময় মানুষ কিভাবে নিজেদের এবং তাদের গবাদি পশু-পাখির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে। গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ আচরণ উঠে এসেছে, যেমন মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে কোথায় যায়, কোন ধরনের অসুস্থতার জন্যে মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক খোঁজে এবং অ্যান্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা। মোদ্দাকথা রোগমুক্তির লক্ষ্যে ব্যবহৃত এসব অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আমরা নিজেদের ইচ্ছায় বা ওষুধ বিক্রেতাদের পরামর্শে কেনা যাবে না। অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শে এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা যাবে। কেননা একই ধরনের রোগ যেমন জ্বরের ক্ষেত্রে সাধারণ প্যারাসিটামল ওষুধ খেলেও নিরাময় হয় আবার অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। এসব বিবেচনা একজন চিকিৎসক যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমেই বুঝতে পারেন। ওষুধের ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব নয়।

অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি রোধে সরকারসহ সাধারণ জনগণকে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান বিশেষজ্ঞরা।

সেমিনারটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা ও এ পর্যন্ত সফল কর্মযজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তারা।

এই গবেষণায় প্রশিক্ষিত ডাক্তার (এমবিবিএস) এবং পশুচিকিৎসক হতে শুরু করে ওষুধের দোকানদারসহ সর্বমোট ৪৬ জন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর (গ্রাম ও শহর মিলিয়ে) সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিলো। যেখানে জানার চেষ্টা করা হয় যে, অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও বিতরণের (ডিসপেন্স) ক্ষেত্রে কী কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া এই গবেষণায় ৪৮টি খানাভিত্তিক সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়। এই ফলাফলের ভিত্তিতে গবেষক দলটি অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ বিক্রি (ডিসপেন্স) ও গ্রহণ করার বিষয়ে কিছু সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তন বিষয়ক কৌশল নির্ধারণ করেছে। গবেষণাটি ‘বাংলাদেশ মডেল ফার্মেসি ইনিশিয়েটিভ’ এর মতোই অ্যান্টিবায়োটিকের উন্নত ব্যবহার বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা সমৃদ্ধকরণে ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

আইসিডিডিআর,বি'র অ্যাডজাঙ্কট সায়েন্টিস্ট ও  ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স বিষয়ক সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। গবেষণার সারসংক্ষেপ উপাস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের লাফবোরো ইউনিভার্সিটির ড. এমিলি রউশাম। আইসিডিডিআর,বি’র মো. রফি উদ্দিন গৃহস্থালী পর্যায়ে পরিবারের সদস্যসমূহ এবং তাদের গবাদি পশুর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। যুক্তরাজ্যের সাসে ইউনিভার্সিটির ড. পাপরিন নাহার অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালস সমূহের বিক্রয় বিষয়ে প্রশিক্ষিত এবং অপ্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
 
আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ফসিউল আলম নিজামী ফর্মেটিভ গবেষণার আলোকে প্রস্তুতকৃত সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তনের বার্তা এবং উপকরণসমূহ উপস্থাপন করেন, যা সুস্থ জীবনের লক্ষ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।

ফসিউল আলম নিজামী বলেন, আমরা এমন একটি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ নাও করতে পারে। গৃহস্থালী পর্যায়ে আবশ্যক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।