ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি পাল্টাবে সিরাজগঞ্জের অর্থনীতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি পাল্টাবে সিরাজগঞ্জের অর্থনীতি

সিরাজগঞ্জ: প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বিশাল জনপদের নাম সিরাজগঞ্জ। মহুকুমা থেকে জেলায় রূপান্তরের প্রায় তিন যুগ পার হলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন পায়নি নয় উপজেলা ও ১১ থানার বিশাল এ জেলাটি। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু হওয়ার পর অবহেলিত জনপদের মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের। কিন্তু না, তা স্বপ্ন-স্বপ্নই থেকে যায়। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত সিরাজগঞ্জ প্রতি ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে থাকে।

বিশেষ করে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে সিরাজগঞ্জ। উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে মানুষকে ছুটতে হতো পাশ্ববর্তী বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী কিংবা টাঙ্গাইল জেলায়।

উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পেতে এবং চিকিৎসা শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল।  

অবশেষে সেই স্বপ্ন এখন পূরণের পথে। জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর নামে চালু হয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জসহ সারাদেশে একযোগে পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। ওই বছরই সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।  

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের একটি ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে পাঁচ ব্যাচে ২৬৮ জন শিক্ষার্থীর অধ্যয়নরত। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শেষ বর্ষ চলছে। চলতি বছরের নভেম্বরে এমবিবিএস পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যাবেন তারা।  

এদিকে, একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি শুরু হয় স্থায়ী ক্যাম্পাস ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ কাজ। শহরের অদূরে শিয়ালকোল ও রঘুনাথপুরের মাঝামাঝি স্থানে জেলার বৃহত্তম এ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।  

সিরাজগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ এবং ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৫ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের একাডেমিক কার্যক্রম চালু হলেও অবকাঠামো স্থাপনের কাজ শুরু হয় পরের বছর (নভেম্বর, ২০১৬ সালে)।  

‘শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প’ নামে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ছোট বড় আটটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শিয়ালকোল প্রায় ৩০ একর জমির উপর নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহীন রেজা বাংলানিউজকে জানান, চারটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এগুলো হলো- চিকিৎসা শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজ ভবন নির্মাণ, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে চিকিৎসক তৈরি, চিকিৎসা শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ ও ডাক্তার-পেশাজীবীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি।  

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ১০তলা ভিতবিশিষ্ট ছয় তলা হাসপাতাল ভবন, ছয় তলা একাডেমিক ভবন, চার তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রাবাস ও একটি ছাত্রীনিবাস, স্টাফ কোয়ার্টার ছয়টি, ডাক্তার ডরমেটরি ভবন দু’টি, নার্স ডরমেটরি ভবন, মর্গ, মসজিদসহ ২৭টি ছোট বড় ভবন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

ইতিমধ্যে ছাত্রবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সেখানে ছাত্ররা উঠে পড়েছেন। প্রকল্পের প্রধান দু’টি ভবন হাসপাতালে নির্মাণ কাজের ৭০ ভাগ ও একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে।

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় সিরাজগঞ্জে প্রতিটি সেক্টরেই ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রকল্প শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এটি সিরাজগঞ্জের বৃহত্তম সরকারি স্থাপনা। এ প্রতিষ্ঠানটি সিরাজগঞ্জের গণমানুষের চিকিৎসাসেবা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।  

সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বাংলানিউজকে জানান, সিরাজগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি। এ হাসপাতাল নির্মিত হওয়ার পর এ জনপদের চিত্রটাই পাল্টে যাবে। এ প্রকল্পটি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের অর্থনীতিকে বদলে দেবে।  

শহীদ এম মনসুর আলী কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সালে এখানে ভর্তি শুর হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে পাঠদান শুর করা হয়। এ বছর ৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এখন সব মিলিয়ে ২৬৮ জন শিক্ষার্থীকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান করা হচ্ছে। চলতি বছরের নভেম্বরে পরীক্ষার মাধ্যমে এ মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্ররা ডাক্তার হয়ে বের হবে।  

তিনি আরও বলেন, মেডিকেল কলেজের নিজস্ব বাস না থাকায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বাস চেয়ে আবেদন করা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।  

সিরাজগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ হবে।  

শহীদ এম মনসুর আলী মেডকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, ইতিমধ্যে নবনির্মিত ছাত্রাবাসে ছাত্ররা উঠে পড়েছে। চলতি সপ্তাহে ছাত্রীনিবাসও হস্তান্তর করা হবে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে একাডেমিক নির্মাণ কাজ শেষ হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।