ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বেসরকারিভাবে যক্ষ্মা চিকিৎসায় ফ্রি ওষুধ দেবে সরকার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
বেসরকারিভাবে যক্ষ্মা চিকিৎসায় ফ্রি ওষুধ দেবে সরকার আলোচনায় অংশ নেওয়া অতিথিরা

ঢাকা: দেশে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে করা হয়। সরকারকে বিভিন্ন বেসরকারি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এ কাজে সহায়তা করলেও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের এক্ষেত্রে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় আনা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেন, যক্ষ্মার চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে হলেও সরকারকে তা অবহিত করলে ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। এই নিয়মে দেশের সব চিকিৎসককে এ সেবার আওতায় আনার কথা জানানো জরুরি।

এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে যক্ষ্মার চিকিৎসা সম্পর্কে সরকারকে একেবারেই অবহিত করা হয় না, যা জাতীয় স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরাসরি সরকারের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে বা সহযোগী বেসরকারি সংস্থাগুলোকে জানানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
 
সোমবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ব্রাক সেন্টারে ‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বহুমুখি প্রয়াস: উদ্যোগ ও করণীয়’ শীর্ষক অবহিতকরণ সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, ব্রাক ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) যৌথভাবে সভার আয়োজন করে।
 
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ উচ্চ যক্ষ্মাপ্রবণ একটি দেশ। বর্তমানে বছরে প্রতি লাখে ৩৬ জন মানুষ যক্ষ্মা ও এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে যক্ষ্মায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। তবে বিপুল সংখ্যক যক্ষ্মারোগী চিকিৎসা না নিয়ে বা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে না এসে মারা যান। বর্তমানে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপে ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীরা। কেননা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতে কমে যায়। ফলে এডিস মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। এ কারণে যক্ষ্মা রোগীদেরকে হাসপাতালগুলোতে বিশেষ সেবার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
 
শিশু যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, শিশু যক্ষ্মারোগীদের রোগ নির্ণয় করা কঠিন। কেননা তাদের কফ নেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য সারাদেশে ২১৫টি জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। যা ৬১৫টিতে উন্নীত করার কাজ চলছে। ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৪ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে ৬ হাজার ১৮৯ জন ০ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬ হাজার ১৮৯ জন (৪.৩২ শতাংশ) যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে। এসব শিশুদের জন্য ৬ মাসের ইনহেনসিভ প্রিভেন্টিভ থেরাপি (আইপিটি) বা যক্ষ্মা পূর্ব সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ অনুসারে কোনো বাসায় যক্ষ্মা রোগী থাকলে ওই বাসার শিশুটি যাতে যক্ষ্মামুক্ত থাকে সে লক্ষ্যে চিকিৎসা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইএনএস-১ ও রিফ্রামপেন্টিন ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম।
 
বক্তারা আরো বলেন, যক্ষ্মায় আইপিটিতে যক্ষ্মা পরবর্তী চিকিৎসাও করা হয়। যাতে ভবিষ্যতে রোগী যেন আবার যক্ষ্মায় আক্রান্ত না হয়। এক্ষেত্রে নতুন টিকা আনার গবেষণা চলছে, যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বর্তমানে একটি টিকা রয়েছে যার মাধ্যমে যক্ষ্মা হওয়ার পর তা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে না ছড়ানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সহায়তা করে।
 
বক্তারা জানান, বর্তমানে শতকরা ২৬ জন রোগী রোগটি নির্ণয়ের আওতার বাইরে থেকে অন্যদের সংস্পর্শে রোগটি ছড়াচ্ছে। যদিও রোগটি নির্ণয় ও চিকিৎসার হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২০১৫ সালে ৫৪ শতাংশ রোগী যক্ষ্মার চিকিৎসার আওতায় থাকলে ২০১৮ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে।
 
বিএইচআরএফ’র সভাপতি তৌফিক মারুফের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম। বিএইচআরএফ’র সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার সফিউর রেজা, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ডা. রুপালী শিশির বানু, ব্রাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর পরিচালক ডা. মো. আকরামুল ইসলাম, সহযোগী পরিচালক ডা. মাহফুজা রিফাত প্রমুখ।     
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
এমএএম/জেডএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।