ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বুকের হাড় না কেটে হার্টে অস্ত্রোপচার এবার সরকারিভাবে

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
বুকের হাড় না কেটে হার্টে অস্ত্রোপচার এবার সরকারিভাবে নূপুরের অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ১০ চিকিৎসক। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে বুকের হাড় না কেটেই হার্টের (হৃদযন্ত্র) সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

রোববার (২৫ আগস্ট) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (এনআইসিভিডি) হাসপাতালে ডা. আশ্রাফুল হক সিয়ামের নেতৃত্বে এ মিনিমাল ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস) করা হয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হাসপাতালে ১২ বছরের মেয়ে নূপুরের এ অস্ত্রোচারে মোট ১০ জন চিকিৎসক অংশ নেন।

নূপুর অ্যাট্রিয়াল সেপটাল ডিফেক্টের (এএসডি) রোগী। তার হার্টের ওপরের দু’টি চেম্বারে ছিদ্র ছিল বলে বাংলানিউজকে জানান ডা. সিয়াম।

এমআইসিএস হলো কার্ডিয়াক সার্জারির সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা। এ প্রক্রিয়ায় বুকে ওপেন হার্ট সার্জারির পরিবর্তে ছোট একটি ছিদ্রের মধ্য দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এক্ষেত্রে, চিকিৎসকরা বুকের হাড় অর্থাৎ স্টানার্ম না কেটে দু’টি হাড়ের (রিবস) মধ্য দিয়ে অস্ত্রোপচার করেন। এতে ব্যথা কম লাগে, রোগীরাও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম বাংলানিউজকে বলেন, বুকের পাঁজরের তিন বা চার নম্বর রিবসের মধ্যে দিয়ে আমরা ছোট্ট একটি ছিদ্র করি, দুই ইঞ্চির মতো আড়াআড়ি ভাবে কেটে তারপর অপারেশন করি। ফুসফুসকে চাপা দিয়ে কাজটি করা হয়।

তিনি বলেন, লেপারোস্কোপি সার্জারি সম্পর্কে অনেকেই জানেন। এটিকে হার্টের লেপারোস্কোপি সার্জারি বলতে পারেন। খুব ছোট্ট একটা ছিদ্র করে এ কাজ করা হয়। এতে সাধারণত ইনফেকশনের ঝুঁকি কম থাকে, রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও কম, অস্ত্রোপচার পরবর্তী অস্বস্তি কম হয়, ক্ষত দ্রুত সারে, রোগী তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় যেতে পারেন।

অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ আছে নূপুর।  ছবি: বাংলানিউজ

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডা. সিয়াম বলেন, আমরা সরকারি হাসপাতালে এ অস্ত্রোপচার শুরু করেছি। এটি অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। সরকারি হাসপাতালে চাইলেই সব কিছু করা যায় না। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জেনে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। ওনার জন্যই এটি শুরু করা গেছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হাসপাতালকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া ও এ বিশেষ অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির কারণেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম।

নূপুরের হার্টের অস্ত্রোপচারে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় নেন চিকিৎসকরা। সে এখন সুস্থ আছে ও তিন ধাপে পর্যবেক্ষণ পর তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে জানান ডা. সিয়াম।

তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হাসপাতাল নিয়মিত এ ধরনের অস্ত্রোপচার করতে পারবে। এজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে ও চিকিৎসকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

নূপুরের অস্ত্রোপচারের সময় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ ও ডা. প্রশান্ত কুমার চন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দেশে এ ধরনের অস্ত্রোপচার প্রথম করা হয় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
এমইউএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।