ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে নিউমোনিয়া 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
ডেঙ্গুর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে নিউমোনিয়া  হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতে না কমতেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। 

গত ২৫ দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জন। তবে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়।

এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ঈদুল আজহার ক’দিন পর থেকে হঠাৎ বৃষ্টি-ঠাণ্ডা ও প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে বেশি আক্রান্ত হয় গত দুই সপ্তাহে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের বারান্দা আর করিডোর যে দিকেই চোখ যায় সেদিকেই এখন শিশু রোগী। বেড ও জায়গা না পেয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে রোগী ও স্বজনরা। অনেকে রোগীকে স্যাঁতসেঁতে মেঝে এমনকি সিঁড়ির নিচেও চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু সন্তানের মা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কালিনগর গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, মাস খানেক আগে তার জমজ সন্তান হয়েছে। জন্মের ২৫ দিনের মাথায় তারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। হাসপাতালে বেড না পেয়ে শিশু ওয়ার্ডের পাশের সিঁড়ির নিচে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

অন্যদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার আড়গাড়াহাটের দীপালী সাহা বলেন, আমার বাচ্চার নিউমোনিয়া ও টাইফয়েড হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। বেড না পাওয়ায় বারান্দায় বিছানা করে শিশুকে নিয়ে আছি।

হাসপাতালের বারান্দায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু অভিভাবক ফারুক হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে জানান, বেড না পেয়ে মেঝেতে অবস্থানের পরও এখন পর্যন্ত তিনি ডাক্তারের দেখা পাননি। ডাক্তার না পেয়ে নার্সরা রোগী দেখছে।  

তিনি অভিযোগ করেন হাসপাতালে বেড নাই, পরিবেশ নাই, পানি নাই। রোগীর চাপে ডাক্তারও পাওয়া যায় না। শিশুকে চিকিৎসা করাতে এসে নিজেই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

করিডোর ও সিঁড়ির পাশে রোগী।  ছবি: বাংলানিউজএ ব্যাপারে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজ রাইহান তাদের অসহায়ত্বের কথা শিকার করে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে না দিতেই নিউমোনিয়া নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়েছি। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন করে শিশু রোগী আসায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছি।  

তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৮ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ভর্তি রোগী থাকছে ১৫৬ এরও বেশি। আর এ ওয়ার্ডটিতে মাত্র দুই জন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবহাওয়া খুব খারাপ যাচ্ছে, ভ্যাপসা গরম। তারপর আবার বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের  ৮০ ভাগই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এর বাইরে টাইফয়েড, সর্দি জ্বরের রোগীও আছে।  

তিনি আরও বলেন, পরিবারে ও মায়েদের অসচেতনতার কারণে নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। মায়েদের ভুল ধারণা ফ্যানের বাতাস দিলে বাচ্চাদের ঠাণ্ডা লেগে যাবে। এমন ধারণায় বাচ্চাদের আলো বাতাস থেকে দূরে রাখছেন। আবার মায়েরা শিশুর শরীরে সরিষার তেল দিয়ে জামা কাপড় পরিয়ে ঢেকে রাখেন এতে করে বাচ্চা ঘেমে গিয়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগী আছে প্রায় তিনগুণ। হঠাৎ করেই রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেন বেড না পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, বারান্দাতেই যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাপসা গরম কেটে গেলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের বাইরেও বহু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এমন অবস্থায় শিশুদের নিউমোনিয়া রোধে মায়েদের শিশু দেহের ঘাম মুছিয়ে দেওয়াসহ যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।