ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সরকারি হাসপাতালে রোগী সেবায় বাধা দালাল সিন্ডিকেট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০
সরকারি হাসপাতালে রোগী সেবায় বাধা দালাল সিন্ডিকেট হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল। ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ, একাধিকবার তালিকা প্রকাশ এবং জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বার বার উত্থাপনের পরও নির্মূল হচ্ছে না হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের দালাল চক্র। প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। এর সঙ্গে বেড়েই চলছে অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালের সংখ্যা। এসব ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন নীরব থাকায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট ভাঙতে গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ২৮ জন দালালের তালিকা তৈরি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়ায় কর্মচারীদের যোগসাজশকেই দায়ী করে আসছিলেন নাগরিক সমাজ।

 

এর কিছুদিন পরই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী পরিদর্শনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দালালদের গ্রেফতারের জন্য কঠোর নির্দেশনা দেন তিনি। কিন্তু এতেও কোনো আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরসহ জেলাজুড়ে রয়েছে  দেড় শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে ১০০’র বেশি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থান জেলা শহরে। প্রত্যেকটির অন্তত দুইজন করে প্রতিনিধি (দালাল) হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রধান ফটকে প্রবেশের পরই ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি ক্লিনিকে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক চিকিৎসক জানান, জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওৎ পেতে থাকেন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা (দালাল)। তাদের রয়েছে বিভিন্ন কোড ওয়ার্ড। উন্নত চিকিৎসার নাম করে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রকাশ্যে এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও ক্লিনিকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে দালালচক্রের যোগসাজশও রয়েছে।
 
তিনি আরও জানান, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশের পর দুই দালাল গ্রেফতার হলেও পরবর্তীতে নীরব ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন। বিভিন্ন সময় সদর হাসপাতালের আধিপত্যকে ঘিরে এক প্রতিষ্ঠানের দালালের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের দালালের মারামারিও হয়ে থাকে। এসব ব্যাপারে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
 
শুধু দালালই নয়, হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫টি ফার্মেসি। প্রতিটি ফার্মেসির অন্তত পাঁচ জন করে লোক ২৪ ঘণ্টা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকেন। গুরুতর অসুস্থ রোগীর স্বজনদের সাহায্যের নাম করে এসব লোকজন অধিক মূল্যে ওষুধ বিক্রি করেন।
 
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হবিগঞ্জ শহরে রয়েছে ৪৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং প্রাইভেট ক্লিনিক। এসবের মধ্যে আটটি অনুমোদনহীন।  

এছাড়া জেলার বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে ৯৭টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার ২৬টিই অনুমোদনহীন। এসবের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
 
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন, নির্দেশনা পেয়ে আমরা একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি। হাসপাতালে সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড। সেখানে ওসি-এসআইয়ের নম্বর রয়েছে। এছাড়া দালাল নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
 
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, অবৈধ ক্লিনিকের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রথীন্দ্র চন্দ্র দেবের সঙ্গে কথা বলতে বার বার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
 
হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য সচিব ডা. আক্তার বলেন, ‘সবসময় তো আমরা বসে বসে দালালদের পাহারা দিতে পারবো না, এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা প্রয়োজন, পুলিশ বিভাগ থেকেও সহায়তা দরকার। এছাড়া যারা দালাল নিয়োগ করেছেন তাদেরও এ ধরনের অপকর্ম থেকে সরে যাওয়া উচিত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।