ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই চলছে বেসরকারি হাসপাতাল

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১১
সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই চলছে বেসরকারি হাসপাতাল

ঢাকা: সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই চলছে দেশের প্রায় ৮ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে  লাইসেন্স নিলেও সুনির্দিষ্ট আইনের অভাবে বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছাচারি আচরণ করছে রোগীদের সঙ্গে।

লোকবলের অভাব এবং অকার্যকর আইনের ফলে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দি মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিকগুলো।

বুধবার রাজধানীর মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, মগবাজার এলাকার আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যায়।

আদ দ্বীন হাসপাতালে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে চেকআপ করাতে এসেছেন রাকিবউদ্দিন। বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এরা রোগীদের প্রতি যতœ নেয় না। আমার স্ত্রীকে বলল ভর্তি করান কিন্তু আবার বলছে বেড নেই। কিন্তু তাদের এখানে ভর্তি না হলে রোগীকে চিকিৎসা দিতে আপত্তি জানিয়েছে চিকিৎসক আবুল কালাম।

এছাড়াও পেসক্রিপশনে আদ দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধের জন্যে রোগীকে এমন ওষুধের পরামর্শ দেন। যে ওষুধ সকল ফার্মাসির দোকানে পাওয়া যায় না।

মেট্রোপলিটন হাসপাতালের অবস্থান মহাখালী বাস টার্মিনালের বিপরীত পাশে। এর পেছনেই রয়েছে নাখালপাড়ার ড্রেন। হাসপাতালের সামনে গাড়ির ওয়ার্কশপ। এখানে যে কোনো চিকিৎসার খরচও ব্যয়বহুল বলে জানান কয়েকজন রোগী।

শমরিতা হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আহত রোগীকে হাসপাতালে আনলেও জরুরি সেবা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন দুলাল আহমেদ।

বাংলানিউজকে বলেন, মাথায় এবং নাকে আঘাত পাওয়ায় আমার চাচাকে নিয়ে এসেছি, কিন্তু এখানে এসে নিবন্ধন থেকে শুরু করে ডাক্তার দেখানো একটি জটিল পক্রিয়া। বাড়ি ফেরার সময় ২ হাজার টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেয়।

হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার জন্য চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, যন্ত্রপাতি, রি-এজেন্টসহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে বিপদে পড়া রোগীদের পুঁজি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

এভাবে রোগীদের হয়রানির নানা অভিযোগ থাকলেও দেশের বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে নজরদারি করা সম্ভব হয় না স্বাস্থ্য অধিদফতরের। প্রয়োজনীয় জনবল, কঠোর আইন ও বিধিবিধানের অভাবে অধিদফতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

অধিদফতরের মনিটরিং ও সুপারভিশনের অভাবে ফ্রি স্টাইলে পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান বাংলানিউজকে বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যথাযথভাবে পরিচালনা এবং মনিটরিং ও সুপারভিশনের জন্য বেসরকারি চিকিৎসাসেবা আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।

সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় সেবাধর্মী এ প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক এক মহা-পরিচালক বলেন, এরশাদ সরকারের আমল থেকে শুরু করে বিএনপি ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে একাধিকবার এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে আইনটি শেষ পর্যন্ত প্রণীত হয়নি।

বর্তমানে দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বৈধভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৭ হাজার ৬২৫টি। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ২ হাজার ৮১৫ এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৪ হাজার ৮১০। রাজধানীতে ৬১০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ৮৭২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

এ সংখ্যা ছাড়াও শুধু সাইনবোর্ড নিয়ে চলছে অসংখ্য বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কোনো পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চরতি বছরের ২৮ এপ্রিল বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা আইন-২০১০-এর প্রস্তাবিত খসড়া পর্যালোচনা ও দেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন করার জন্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএফএম সাইফুল ইসলামকে সভাপতি ও ডা. মো. মোমতাজউদ্দিন ভুঞাকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।

এ কমিটি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে একটি খসড়া চূড়ান্ত করলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি বলে জানা যায়।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।