ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘এক মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানে বাঁচতে পারেন আটজন’ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
‘এক মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানে বাঁচতে পারেন আটজন’ 

ঢাকা: সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেছেন, মরণোত্তর অঙ্গদান ও সংযোজনের মাধ্যমে একজন মৃত ব্যক্তি আটজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মরণোত্তর কিডনিদানকে ত্বরান্বিত করুন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মরণোত্তর হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গদানের মাধ্যমে একজন মৃত ব্যক্তি আটজনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন।

শুধুমাত্র একটি সৎ ইচ্ছাই পারে একজন মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিতে। ’

তিনি বলেন, ‘দেশে কিডনি ডায়ালাইসিস করেও পাঁচ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত বেঁচে আছেন। কিডনির কার্যকারিতা ১৫ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ার আগে এবং ডায়ালাইসিস করার আগেই কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারেন। এসব রোগী কিডনি প্রতিস্থাপন করলে ডায়ালাইসিস থেকে মুক্তি পাবেন। এটাই একমাত্র সম্ভব মরণোত্তর কিডনিদানের মাধ্যমে। ’

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। এরমধ্যে দুই শতাংশ মরণোত্তর কিডনিদানের মধ্যে সম্ভব হয়। এছাড়া শ্রীলংকা, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের মরণোত্তর কিডনি দানের পদ্ধতি চালু আছে। আমাদের দেশেও সরকারি অনুমোদন আছে, কিন্তু এখনও সেটা চালু করা সম্ভব হয়নি। ’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য আমাদের যথেষ্ট দক্ষ জনবল আছে। আমাদের কাজের দক্ষতা নিয়ে দেশের মানুষের কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে এ পর্যন্ত ৫৫৮টি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন হয়েছে। গত সপ্তাহে আমরা দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছি। ’

কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘এ বছর সারাদেশে মুজিববর্ষ পালন করা হবে। আমরাও মুজিববর্ষ পালন করবো। এ বছরই আমরা মরণোত্তর কিডনিদানের মাধ্যমে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু করবো। ’

এ বিষয়ে প্রথমে ডাক্তারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান তিনি।

বক্তারা বলেন, ‘দেশের দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ কিডনি রোগের চিকিৎসা পায়। বাকি ৮০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়ে যায়। ’

তারা আরও বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছেন। ’

এছাড়া মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দেশ সৌদি আরব ও ইরান মরণোত্তর কিডনি দানের সর্বোচ্চ পরিমাণ উদাহরণ স্থাপন করেছে।

যদিও বাংলাদেশ ১৯৮২ সাল থেকে কিডনি সংযোজনের ডায়ালাইসিস সেবা চালু রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সেই তুলনায় দেশে তেমন প্রতিস্থাপন হচ্ছে না।

বক্তরা জানান, দেশে গত বছর থেকে সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন মরণোত্তর কিডনি জানার উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু মানুষের সচেতনতা ও অনাগ্রহের কারণে সেটি ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। এ বছর আবারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ইউএসএ’র ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি ফিলাডেলফিয়ার এমিরেটাস অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদসহ বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট, নেফ্রলজিস্ট, ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
পিএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।