ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনার হটলাইনে নারী কণ্ঠ শুনলেই আপত্তিকর প্রশ্ন

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
করোনার হটলাইনে নারী কণ্ঠ শুনলেই আপত্তিকর প্রশ্ন ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশে বেশ কয়েকটি হটলাইন নম্বর চালু করেছে সরকার। নাগরিকদের করোনা সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য-পরামর্শ এবং সময়োপযোগী সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে চালু করা হয়েছে এসব হটলাইন। কিন্তু সেই হটলাইনগুলোতেই ‘আপত্তিকর প্রশ্ন’ করছেন অনেক কলার। বিশেষ করে হটলাইনের ওপারে নারী কণ্ঠ শুনলেই আপত্তিকর এবং অবাঞ্ছিত প্রশ্ন করছেন অনেকেই।

সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, করোনা ইস্যুতে দুটি হটলাইন চালু করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) - ০১৯৪৪৩৩৩২২২ এবং ১০৬৫৫। এই দুটি নম্বরের ব্যাক এন্ডে ইন্টার অ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) প্রযুক্তির সহায়তায় সচল থাকে আরও ১৭টি নম্বর।

এছাড়া জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ এবং জাতীয় তথ্য সেবা বাতায়নের ৩৩৩ নম্বরও আছে করোনা হটলাইন হিসেবে। একই সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি হটলাইন চালু করেছেন।

এসব হটলাইনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে পরামর্শ এবং তথ্য সেবা দিয়ে থাকেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি বিভিন্ন অবাঞ্ছিত কল পাচ্ছেন তারা। করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা দেওয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করলেও অনেক কলারই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রশ্ন করছেন; কথা বলতে চাইছেন। বিশেষ করে হটলাইনে কোনো নারী কণ্ঠ শুনলেই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রশ্ন আরও বেশি জিজ্ঞেস করা হয়। মাঝে মাঝে দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তার ব্যক্তিগত বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়; জানতে চাওয়া হয় উত্তর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরণ ছাড়িয়ে যায় শিষ্টাচার এবং শালীনতা।

হটলাইনে সেবা দেওয়া বেশ কয়েকজন চিকিৎসক সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিব্রতকর এসব পরিস্থিতির বর্ণনা তুলে ধরেন। এক নারী চিকিৎসক (পরিচয় গোপন রাখা হলো) তার ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ‘আইইডিসিআরের হটলাইনে কাজ করার পর একটা উপলব্ধি হইছে যে, দেশের বহু মানুষের আসলে কোনো কাজই নাই এবং তাদের তেল অনেক বেশি। নাহলে মেয়ে কণ্ঠ শুনেই ‘আপনি বিয়ে করছেন’, ‘আপনার বয়স কত’, ‘যৌবন ফিরে পাব কীভাবে’, ‘দুলাভাই কী করে’,  ‘এই ফোন দিসি এমনিই, আপনার সাথে কথা বলার জন্য’, ‘আমাকে ফোন ব্যাক করেন, আপনার সাথে কথা বলতে চাই’, ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ঘটতো না। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি সৌদি আরব থেকে একটা গ্রুপ লিটারেলি ১০ বারের ওপর ফোন দিয়ে নানাভাবে বিরক্ত করেছে। সমাজসেবা কঠিন জানতাম, তবে এতটা বেহায়াপনা দেখা লাগবে জানতাম না সত্যি। ’ 

এসব হটলাইনে সেবা দেওয়া কয়েকজন চিকিৎসক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অবাঞ্ছিত কল করা ব্যক্তিদের মাঝে দেশের বাইরে প্রবাসীদের একটি সিন্ডিকেট বা গ্রুপ আছে বলেও সন্দেহ তাদের। এক নারী চিকিৎসক জানান, তিনি কল রিসিভ করার পর কলার তাকে বিভিন্ন অশালীন কথাবার্তা বলেন এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে একটি গ্রুপ অসংখ্যবার কল করে নানাভাবে বিরক্ত করছে। অসুস্থতা কিংবা চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশ্ন না করে নানা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছে।

জানা যায়, এসব হটলাইনগুলোকে কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প। হটলাইনে এমন অবাঞ্ছিত কল আসার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন প্রকল্পের কর্তা ব্যক্তিরাও। প্রকল্পের একটি সূত্র বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। ইতোমধ্যে এইসব কলারদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। সকল অবাঞ্ছিত কলারদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তবে করোনার মতো এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের আহবান জানিয়ে সূত্রটি বলেন, এসব হটলাইন মানব সেবায় করা হয়েছে। এই সময়ে সবারই দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। এখানে যারা কাজ করছেন তারা মানবতার সেবায় এই সংকটে কাজ করছেন। তাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা কোনভাবেই ঠিক না। আবার এসব অবাঞ্ছিত কলের কারণে অহেতুক জরুরি এসব নম্বর ব্যস্ত থাকে। এর ফলে আসলেই যার তথ্য বা সেবা দরকার তিনি হয়তো কাঙ্ক্ষিত সেবা সঠিক সময়ে পাচ্ছেন না। এটা জীবন মরণের সাথে জড়িত। এমনটা করা উচিত না।

এদিকে এমন কল করা আইন বিরুদ্ধ এবং এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নাজমুল ইসলাম। তিনি  বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ নেব। একই সাথে যারা এমন সময়ে এই ধরনের অপরাধ করছেন, তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করতে সম্ভব সব পদক্ষেপই নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
এসএইচএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।