ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ পৌষ ১৪৩১, ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ রজব ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চার দিনে ৩০ টাকার ওষুধ সেবনে নমুনা নেগেটিভ

পাঠান সোহাগ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
চার দিনে ৩০ টাকার ওষুধ সেবনে নমুনা নেগেটিভ

ঢাকা: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পজিটিভ রোগীর ওপর উকুন কিংবা খোস-পাঁচড়ার ব্যবহৃত ওষুধ ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন প্রয়োগে অল্প সময়ে সুস্থ হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম। 

তিনি দাবি করেন, এই ওষুধ দুটি ব্যবহারের ফলে করোনা আক্রান্ত কোভিড-১৯ পজিটিভ মোট রোগীর ৮০ শতাংশকে তিন থেকে চার দিনে সুস্থ করা সম্ভব। আর প্রথম চার দিনে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ওষুধ সেবনের পর নমুনা পরীক্ষায় প্রথম নেগেটিভ আসে।

বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

তিনি বলেন, এই ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সরকার চাইলে যাদের কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে, বাড়িতে আইসোলেশন থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, কোয়ারেন্টিনে আছেন, কিংবা যাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন, আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ দিয়ে সাধারণভাবে ট্রায়াল দিতে পারে। ১ হাজার রোগীকে এই ওষুধ দিয়ে তিনদিন পর পর পরীক্ষা করা যেতে পারে। যদি ফল ভালো আসে, তাহলে আমরা এ ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত করতে পারবো।  এর ফলে দেশে সুস্থ হওয়ার হার দ্রুত বাড়বে। লকডাউন প্রয়োজন হবে না। অফিস-আদালত নির্দ্বিধায় খুলে দিতে পারবে সরকার। শুধু ক্রিটিক্যাল রোগীদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিলে দেশে সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষার্থী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ ৬০ জনের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন। এতে সুফলও এসেছে। এই ওষুধ প্রয়োগ তিনদিনের মধ্যে রোগীদের ৫০ শতাংশ উপসর্গ কমেছে। আক্রান্ত হওয়ার চারদিন পর নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভও এসেছে। ৮ থেকে ১০ দিনে মধ্যে ৪৫ জনের দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করাই। তাতে এদের সবারই নেগেটিভ আসে। সবাই ভালো আছেন। এখনো ১৫ জন দ্বিতীয়বার পরীক্ষার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। আমার বিশ্বাস, এদের নেগেটিভ আসবে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ৮০ থেকে ৯০ টাকার ওষুধ লেগেছে। আর প্রথম তিনদিনে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ওষুধ সেবনে পর নমুনা পরীক্ষায় প্রথম নেগেটিভ এসেছে।

ডা. তারেক আলম বলেন, কোভিড-১৯ পজিটিভ ৬০ জন রোগীকে চিকিৎসার জন্য ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন এই দুটি ওষুধই দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্যারাসিটামল, কাশির সিরাপ আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। এর বাইরে অন্য কোনো ওষুধ প্রয়োগ করেনি। এই ওষুধের খুব ভালো এন্টিভাইরাল পোপার্টি আছে। ‘সার্স’ মহামারির সময় এটা ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা ডেঙ্গুতেও কাজে লাগে।

তিনি বলেন, আমরা যে ৬০ জনের এই ওষুধ দিয়েছি তাদের বয়স ২০ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে ছিল। এই ওষুধ ১৫ কেজি ওজনের বেশি সবাইকে দেওয়া যায়। গর্ভকালীন অবস্থায় এবং ১৫ কেজির নিচের শিশুদের দেওয়া যাবে না। কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পরেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই ওষুধ সেবন করতে বলেন তিনি।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমাদের কয়েকজন নার্সের কোভিড পজেটিভ হলে তাদের মধ্যে ডায়রিয়া-শ্বাসকষ্ট-কাশিসহ কোভিডের একাধিক উপসর্গ ছিল। কোভিড হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি। নিজেরাই এই ওষুধে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের ডায়রিয়া-জ্বর-কাশির জন্য ওষুধের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন ও আইভারমেকটিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের উপসর্গ ৫০ শতাংশ কমে যায়। পাতলা পায়খানা, প্রচণ্ড কাশি, ১০৫ ডিগ্রি জ্বর ওষুধ দেওয়ার পরের দিন থেকেই কমতে শুরু করে। পরে তাদের পরীক্ষা করা হলে নেগেটিভ আসে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কোভিড হাসপাতাল না হওয়ায় আইসিইউতে ভর্তি রোগীকে এই ওষুধ দিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। সরকারি হাসপাতালেও আমাদের পরিচিত কয়েকজন চিকিৎসক আইভারমেকটিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে।  ইতোমধ্যে আমাদের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এবার কেয়ার হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচিত চিকিৎসকরা তাদের রোগীদের এই ওষুধটা দিচ্ছে।

ওই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, আমরা যদি সর্বনিম্ন ১০০ জনের মধ্যের এই ওষুধ প্রয়োগ করে শতকরা কত শতাংশ সুস্থ হয়েছেন এই হারটা নির্ণয় করতে পারি, তাহলে বিদেশি জার্নালে এটা প্রকাশ করা যাবে। তখন এর গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে। আমরা শুধু ফাইন্ডিংসটা বলে দিয়েছি। সরকারিভাবে যদি ট্রায়াল হয় তাহলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে। সরকারিভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যেকোনো একটিতে প্রাথমিকভাবে ওষুধ দুটির প্রয়োগ করলে সহজেই সিদ্ধান্ত পাবে সরকার। একসঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ রোগীর উপর এই ওষুধ প্রয়োগ করার সুযোগ আমার কাছে নেই। আমার সাধ্যের বাইরে। এটা সরকারিভাবে প্রয়োগ না করলে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সবাই চায়, তাদের গবেষণায় শতকরা ১০০ শতাংশ সফল হউক। ওষুধ প্রয়োগের ফলে ১০০ শতাংশ না হোক এর কাছাকাছি সফলতা আসবে।

ডা. তারেক আলম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে সেই আলোচনা অফিসিয়ালি ছিল না। আনঅফিসিয়ালি আইসিডিডিআর’বি ও আইইডিসিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।  আইসিডিডিআর,বি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে এই ওষুধদের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করছে। আইইডিসিআর বলছে, তারাও এই ওষুধ ব্যবহার করবে।

তিনি বলেন, ২ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনির্ভারসিটির ফার্মেসি বিভাগ একটি গবেষণা প্রকাশ করে। আমরা যে ওষুধ উকুন বা খোস-পাঁচড়ার জন্য ব্যবহৃত করি, সেই ওষুধ তারা ইঁদুরের টিস্যুতে পরীক্ষা করেন। তাতে দেখা যায়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাসটি ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার গুণ কমে যায়। এই ওষুধ বাংলাদেশ পর্যাপ্ত আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাওয়া যায়। বেক্সিমকো ও ডেল্টা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড এ ওষুধ প্রস্তুত করে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই দুটি ওষুধ নিয়ে কাজ করতে নেমে ছিলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
পিএস/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।