ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

চিকিৎসা না দিয়েই হাসপাতালের বিল ৭৫ হাজার টাকা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২০
চিকিৎসা না দিয়েই হাসপাতালের বিল ৭৫ হাজার টাকা! মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতাল

সিলেট: তিনদিন হয় আজো ডাক্তার আসেনি। রোগীর কী অবস্থা, তাও জানায়নি। জিজ্ঞেস করলে বলেন, ডাক্তার আসছে না। এক রাত সিসিইউতে, এক রাত কেবিনে। বিল ৭৫ হাজার।

বানোয়াট কথা বলে ভর্তি করে রোগী মারা যাওয়ার উপক্রম। রোগী মারা গেলে ক্ষতিপূরণ কে দেবে? সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল মাউন্ট অ্যাডোরার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রোগীর স্বজন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাপ মিয়ার।

 

অবশেষে তিন দিনের মাথায় গুরুতর অবস্থায় ৪৫ হাজার টাকা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন তিনি। যাওয়ার আগে প্রতিবেশি এক চিকিৎসকের জিম্মায় ২০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে রোগী বের করেন। এখনো ৫৪ হাজার ৩৭৫ টাকা রোগীর কাছে পাওনা হাসপাতালটি।   

রোগীর অভিভাবক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাপ মিয়া বলেন, হাসপাতালে ভর্তির আগে আমরা খোঁজ খবর নেই। অভ্যর্থনা শাখা থেকে বলা হয় কিডনি রোগের চিকিৎসক ডা. আলমগীর চৌধুরীসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেন। আপনারা আগে ভর্তি করেন। ভর্তির পর রোগী একদিন সিসিইউতে এবং একদিন কেবিনে রাখা হয়। আমরা ওষুধ পথ্য সব কিনে দেই। শনিবার (৬ জুন) তিনদিন পরও কোনো চিকিৎসক দেখাতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে বলা হয় ডা. আলমগীর চৌধুরীকে পাওয়া যাবে না। নেফ্রলজির ডা. নাজমুস সাকিবকে পাওয়া যাবে। কিন্তু তাকেও আনতে ব্যর্থ হন তারা।  

তিনি বলেন, রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তারা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে হাতে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার বিল ভাউচার ধরিয়ে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

রোগীর মেয়ের জামাতা কামরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমরা চিকিৎসক পাবো নিশ্চিত হয়েই রোগীকে ভর্তি করেছিলাম। ওষুধও কিনে দিয়েছি। এরপর বিল প্রায় ৭৫ হাজার। ভর্তির পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যে ব্যবহার পেয়েছি, তাতে মানুষ করোনায় মরতে হবে না, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবহারে এমনিতেই মারা যাবে।

অথচ গত শুক্রবার চিকিৎসার অভাবে চার হাসপাতাল ঘুরে ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের মৃত্যু হয়। তাকে নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘুরেছেন সন্তানরা। ভর্তি করেনি কোনো বেসরকারি হাসপাতাল। একটু অক্সিজেন সাপোর্টের অভাবে বাবাকে বাঁচাতে পারেননি সন্তানরা। অবশেষে নিয়ে যান ওসমানীতে। সেখানে নিয়ে গেলে ওই ব্যবসায়ীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। শনিবার (০৬ জুন) এ ঘটনার প্রতিবাদে নগরীতে কফিন কাধে মিছিল করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

 

গত শুক্রবারের (৫ জুনের) ঘটনা এটি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নগরের মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসা না দিয়েই রোগীর স্বজনদের মোটা অংকের বিল ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো।

এদিকে, সিলেটে ব্যবসায়ী মৃত্যুর ঘটনার পর হাসপাতালগুলোতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি শুক্রবার এসব হাসপাতাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেটের দায়িত্বে নিয়োজিত পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন।
 

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২০

এনইউ/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।