ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেক করোনা ইউনিটে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
ঢামেক করোনা ইউনিটে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণ বাড়ায় রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিট দু’টিতে আগত রোগীর স্বজনরা মানছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। ফলে অধিক হারে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে সুস্থ মানুষের শরীরে। এজন্য নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে।

এ নিয়ম মানলেই করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত হবে ব্যক্তি ও পরিবার। অথচ ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট দু’টিতে দেখা যায় আগত রোগীর স্বজনসহ হাসপাতালে আগত লোকজন কোনো স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই সরাসরি করোনা ইউনিট গুলোতে শুধুমাত্র একটি মাস্ক পরেই প্রবেশ করছেন। এতে তাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এসব লোকজনদের করোনা ইউনিট গুলোতে প্রবেশে কোনো বাধা ও দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে না।

সম্প্রতি ঢামেকের করোনা ইউনিট দু’টির সামনে গিয়ে দেখা যায়, করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রবেশ করছে শুধু একটি মাস্ক পরে।  আবার তারা বেরিয়ে যাচ্ছেন।  ইউনিট দু’টির সামনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত নেই কোনো আনসার সদস্যরাও।  

ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের দু’টি ভবনকে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। একটি নতুন ভবন ও অপরটি বার্ন ইউনিট। সেখানে আগত রোগীর স্বজনসহ হাসপাতলে আগত ব্যক্তিরা শুধু একটি মাস্ক পরে করোনা ইউনিটে প্রবেশ করছেন। হাসপাতালের প্রবেশ মুখে তাদের কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এসব লোকজন করোনা ইউনিট থেকে বের বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অফিসে যাচ্ছে। তাদের কারণে হয়তো করোনা সংক্রমণ অধিক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে অনেকেই ধারণা করেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীর সামনে না যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

.
এদিকে ঢামেকের দু’টি করোনা ইউনিটের প্রবেশ মুখে হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য কয়েকটি বেসিন বসানো হয়েছে। কিন্তু করোনা ইউনিটে আগত স্বজনরা সেসব বেসিনে হাত জীবাণুমুক্ত করা তো দূরের কথা সেখানে ফিরেও দেখছে না।

হাসপাতালে আনসার সদস্যদের করোনা দুটি ইউনিটের প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করলেই করোনা আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা মানুষগুলো সতর্ক হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করবে ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের  নির্দেশনা মেনে হাত জীবাণুমুক্ত করতে বাধ্য হবে।

করোনা ইউনিট-১ এর সামনে হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য কয়েকটি বেসিন লাগিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে গিয়ে দেখা যায় কোনো বেসিনেই পানি নেই। একটি বেসিন ভাঙা। আবার নতুন ভবনের নিচতলার সামনে দু’টি বেসিন লাগানো হয়েছে। সেখানেও বেসিনে পানি থাকলেও হাত ধোয়ার করার জন্য নেই সাবান।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিস্তারিত বিষয় শুনে বলেন,  এটা খুবই সিরিয়াস বিষয়, হাসপাতলের করোনা ইউনিটে সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া প্রবেশ করছে এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে তো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ব্যাপারটা আমরা খুব সিরিয়াসভাবে দেখছি। এখনই আমি হাসপাতালে সেন্ট্রাল মাইকে আনসার সদস্যসহ সবাইকে সতর্ক করতে নির্দেশনা দিচ্ছি।

হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য বেসিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেসিনগুলো যেখানে লাগিয়েছি সেটা ঠিক হয়নি। আমরা আবার নতুন করে বেসিনগুলো লাগিয়ে দিচ্ছি। সেখানে হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য সাবানও দেওয়া হবে। পিপিই পরাসহ সবাই যেন হাত জীবাণুমুক্ত করে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে প্রবেশ করতে পারে এজন্য সেখানে আনসার সদস্যদের ডিউটি দেওয়া হবে।

এর কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতালের সেন্ট্রাল মাইকে পরিচালক নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। নির্দেশনা গুলো ছিল এমন ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সুরক্ষাসামগ্রী পরে হাসপাতালে প্রবেশ করুন। আপনাদের অবহেলার জন্য অন্য কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হোক, এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আনসার সদস্যরা আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন। স্বাস্থ্যসুরক্ষা ছাড়া কাউকেই হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেবেন না। এ ব্যাপারে কারো যদি অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ’ বলে সতর্ক করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
এজেডএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।