ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনা মহামারিতে অনেকেই ধূমপান ছাড়ছেন

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
করোনা মহামারিতে অনেকেই ধূমপান ছাড়ছেন ছবি প্রতীকী

ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মহামারি রূপ ধারণ করে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে ধূমপায়ীদের মনে। বিশেষ করে ‘করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যারা ধূমপায়ী তাদের মৃত্যুহার বেশি’ এমন গবেষণা সে ভয়কে আরো তীব্র করে তুলেছে। ফলে অনেকেই ছাড়ছেন ধূমপান।

আমিনুর রহমান নামের বেসরকারি চাকরিজীবী। ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তির ধূমপানের অভ্যাস সেই ১৯৯৭ সাল থেকে।

মাঝখানে ২৩ বছর এ নিয়ে কোনো ভীতিই ছিল না তার। বরং রীতিমতো উপভোগ করেছেন সিগারেট ফোঁকা। কিন্তু করোনা মহামারি এসে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলে তাকে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মার্চে যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো সরকার, আতঙ্কটা তখনই কাজ করা শুরু করলো। অফিসও বন্ধ হলো। নিজের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে একদিন প্রতিজ্ঞা করলাম, আর হাত বাড়াবো না। সেই থেকে তিন মাস হতে চললো। এখন আর মনেই হয় না, যে আগে কখনো ধূমপান করতাম।

ফরহাদ হোসেন খানের বয়স ৩৮ বছর। সরকারি একটি সংস্থায় পরিচালক পদে কাজ করছেন। ২০০১ সাল থেকে ধূমপানের অভ্যাস।

তিনি বলেন, এটা খুব ভয়ঙ্কর, যে ধূমপানের কারণে করোনা আক্রান্ত হলে মৃত্যুর শঙ্কা বেশি। ছোট সন্তান আছে। তাই নিজের কথা না ভাবলেও পরিবারের কথা ভেবেই নিজের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করা। তারপর এপ্রিলে ছেড়েছি। এমন আরো অনেকের সঙ্গেই কথা হয়, যারা মূলত করোনার ঝুঁকি কমাতেই নিজে থেকেই সরে এসেছেন ধূমপান থেকে। অনেকেই চেষ্টা করে ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন পর আবার শুরু করেন।

এ বিষয়ে তারা বলছেন, মানসিক দৃঢ়তার কোনো বিকল্প নেই। প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগে। শরীর নিকোটিন চায়, যার বিভিন্ন লক্ষণও প্রকাশ পায়। মাথাব্যথা করে, শরীরে চুলকায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়; তবে এটা কয়েকদিন পরেই ঠিক হয়ে যায়।

আমিনুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের অভ্যাস থেকে সরে এলেও প্রথমে কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এটা ঠিক হয়ে যাবে কয়েকদিনেই। তাই একটু ধৈর্য ধরলে এবং নিজেকে অন্য বিকল্প ভালো লাগার বিষয়গুলোতে ব্যস্ত রাখলে কোনো সমস্যা হবে না।

ফরহাস হোসেন বলেন, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ায় স্বাস্থ্যের উন্নতি টের পাচ্ছি। সিঁড়ি বেয়ে উঁচু ভবন উঠলেও আগের মতো হয়রান লাগে না। শরীরে এনার্জি বেশি পাচ্ছি। আমি তো বলবো সবাই ছেড়ে দিক। যারা ছেড়ে দেবে তারা কেবল বুঝতে পারবেন ধূমপান ছাড়ার সুফল কী!

ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বড় কারণ। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলে ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে, শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। আর করোন ভাইরাস আক্রমণই করে ফুসফুসে। ফলে ধূমপায়ীরা করোনায় আক্রান্ত হলে এবং তাদের মধ্যে কারো যদি ফুসফুস আগে থেকেই দুর্বল থাকে, তবে সেটা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের দাবি।

তবে উল্টো গবেষণাও আছে। ইতালি, ফ্রান্সের গবেষকরা বলছেন, নিকোটিন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়াতে বাধা সৃষ্টি করে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক জানিয়েছেন, নিকোটিন সেল রিসেপ্টরকে উদ্দীপিত করে। ফলে ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের এই পরস্পর বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার হতে হয়তো আরো গবেষণার প্রয়োজন হবে। তবে ধূমপান যে ফুসফুসকে অকার্যকর করে ফলে এ নিয়ে কারো দ্বি-মত নেই। তাই এই করোনাকালকেই ধূমপান ছাড়ার উত্তম সময় বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২০
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।