ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কাপ্তাই ১০ শয্যার হাসপাতাল নিজেই এখন রোগী

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
কাপ্তাই ১০ শয্যার হাসপাতাল নিজেই এখন রোগী কাপ্তাই ১০ শয্যার হাসপাতাল। ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি:  রাঙামাটির পর্যটন খ্যাত অপরূপ নগরী কাপ্তাই উপজেলা। অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত।

এখানে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষা, খেলাধুলার দিক দিয়ে এ উপজেলা অনন্য। এই উপজেলাকে বলা সমৃদ্ধ নগরী।

এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকার পাশাপাশি জনগণের ঘনত্ব হিসেব করে তৎকালীন সরকার কাপ্তাই ইউনিয়নের মূল সড়কের পাশে লক গেট এলাকায় পাহাড়ি টিলার উপর একটি ১০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করে দেয়। নির্মাণের পর থেকে স্থানীয়দের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একাংশ বাসিন্দারাও হাসপাতালটি থেকে সেবা নিয়ে থাকে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে কর্তৃপক্ষের সুনজরের অভাব, তদারকির গাফলতির কারণে রোগী সেবা দেওয়ার পরিবর্তে হাসপাতালটি নিজেই যেন রোগী বনে গেছে। এ অবস্থা যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি সেবার কক্ষ অত্যন্ত নাজুক। ডাক্তার, রোগী, কর্মচারী বা তাদের থাকার আবাসস্থলের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। বর্ষার এ মৌসুমে হাসপাতালের প্রতিটি কক্ষের উপরের টিন নষ্ট হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। একটু বৃষ্টি হলেই রোগীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন। দায়িত্বরত ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীরাও খুব কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে হাসপাতালটি সংস্কারের ব্যাপারে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

কাপ্তাই ১০ শয্যার হাসপাতাল।  ছবি: বাংলানিউজহাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা আমেনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, একটু বৃষ্টি হলে হাসপাতালে অবস্থান নেওয়ার মতো কোনো পরিবেশ থাকে না। পরে সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়।

সেবা নিতে আসা বাবুল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কি করবো? কোথায় যাবো। সরকারি হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসা নেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। কর্তৃপক্ষের উচিত হাসপাতালটি মেরামত করে আগের গৌরব ফিরিয়ে আনা।

আব্দুল হাকিম বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালটি জরুরিভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন। তা না হলে এই এলাকায় বসবাসরত হাজারো মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালটি সংস্কারের জন্য বেশ কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষে থেকে টেন্ডার করা হয়েছিলো। কিন্তু যিনি ঠিকাদার ছিলেন, তিনি নামে মাত্র কাজ করে বিল তুলে নিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যে কারণে হাসপাতালের বেহাল অবস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটি পরিচালনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এই হাসপাতালটি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ১০ শয্যা। এখানে ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী সংকট রয়েছে।  

অভিযোগ আছে, হাসপাতালটির এমন করুণ অবস্থার কারণে সপ্তাহে একজন ডাক্তার এসে ২-৩ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে চলে যান। নার্স, কর্মচারীরা তেমনভাবে ডিউটি করে না। যে কারণে রোগীরা এসে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হয়ে অনেকবার ফিরে গেছেন। এছাড়াও এলাকায় কোনো রোগী মারা গেলে হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় মৃত্যু সনদের জন্য পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।

কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ১০ শয্যার হাসপাতালের সমস্যার সমাধান ও সংস্কার নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। কিছুদিন আগে সির্ভিল সার্জন এসেও পরির্দশন করেছেন হাসপাতালটি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের জরাজীর্ণ পরিবেশের কারণে ডাক্তার, নার্স এবং কর্মচারীরা যেমন ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করতে পারে না তেমনি সেবাবঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা।  
এজন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ যদি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় তবে হাসপাতালটি তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।