ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে সিটিস্ক্যান ছাড়া ভর্তি অনিশ্চিত! 

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২০
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে সিটিস্ক্যান ছাড়া ভর্তি অনিশ্চিত!  হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড়, ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: সিটিস্ক্যান ছাড়া খুব কম রোগীই টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

অভিযোগ রয়েছে, প্রতি সিটিস্ক্যান থেকে চিকিৎসক পান এক থেকে দেড় হাজার টাকা কমিশন।

এতে জরুরি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। আর সিটিস্ক্যান না করালে ওই রোগীকে ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই ভর্তিচ্ছু রোগীরা সিটিস্ক্যান করেন।

সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। রাতের ডিউটি বাদে প্রতি ছয় ঘণ্টা পরপর (সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত) জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেন চিকিৎসকরা। আর এখান থেকেই চলে সিটিস্ক্যান বাণিজ্য।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল জেলায় পাঁচটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিটিস্ক্যান করানো হয়। এগুলো হলো জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন সোনিয়া নার্সিক হোম, নিউ ঢাকা ক্লিনিক, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে সেবা ক্লিনিক, শান্তিকুঞ্জ মোড়ের মেডিনোভা ক্লিনিক ও আয়শা মেমোরিয়া হসপিটাল। জেনারেল হাসপাতলে সিটিস্ক্যান মেশিন না থাকায় এসব ক্লিনিক থেকেই রোগীরা সিটিস্ক্যান করান।

জাহানারা বেগম (৫০) নামের এক রোগী জানান, তিনি এসেছেন মাথা ব্যথার চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এসেই জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিফাত বলেন, আপনি সিটিস্ক্যান করিয়ে নিয়ে আসুন, এরপর আপানাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এসময় তিনি ওই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, সিটিস্ক্যান করতে কতো টাকা লাগে। উত্তরে চিকিৎসক বলেন, সাড়ে চার হাজার টাকা হলে সিটিস্ক্যান করাতে পারবেন। আমি আপনার জন্য এক হাজার টাকা ডিসকাউন্ড করে দিলাম। পরে তিনি হাসপাতাল সংলগ্ন সোনিয়া ক্লিনিকে গিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকায় সিটিস্ক্যান করে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি হন।

কালিহাতী উপজেলার সল্লা এলাকা থেকে আসা জয়তন বেগম নামের আরেক রোগী জানান, তিনি এসেছেন চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে। এর আগে তিনি এ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি এসেছিলেন পেটের ব্যথার চিকিৎসা করাতে। কিন্তু ওই সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান তাকে সিটিস্ক্যান ছাড়া ভর্তি করবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন। পরে তিনি বাধ্য হয়েই সেবা ক্লিনিক থেকে সিটিস্ক্যান করে হাসপাতালে ভর্তি হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ক্লিনিকের মালিক জানান, টাঙ্গাইলে পাঁচটি ক্লিনিকে সিটিস্ক্যান করানো হয়। আর প্রতিটি সিটিস্ক্যান করতে রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় সাড়ে চার হাজার টাকা। যে চিকিৎসক যে রোগী পাঠাবেন, ওই চিকিৎসককে দেড় হাজার টাকা কমিশন দিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। আর যদি কোনো চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসাপত্রে লিখে দেন, তাহলে এক হাজার টাকা ডিসকাউন্ড। সে ক্ষেত্রে ওই চিকিৎসককে এক হাজার টাকা কমিশন দিতে হয়। এমনকি মাঝে মধ্যে চিকিৎসক ফোন করে বলেন, রোগী পাঠালাম, কমিশনের টাকাটা বিকাশে পাঠিয়ে দিয়েন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শরিফুল ইসলাম সজিব বাংলাানউজকে জানান, ক্লিনিক মালিকরা প্রতিটি সিটিস্ক্যানে সাড়ে চার হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন। এজন্য তিনি প্রতি চিকিৎসককে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ব্যবস্থাপত্রে সিটিস্ক্যান করানোর জন্য এক হাজার টাকা ডিসকাউন্ড লিখে দেন। এজন্য চিকিৎসকরা ডিসকাউন্ড লিখে দেন।  

তবে চিকিৎসকরা ডিসকাউন্ড দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন কিনা- তিনি এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।