ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা: ঢামেক চিকিৎসকদের ব্যর্থতার দায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
জীবিত শিশুকে মৃত ঘোষণা: ঢামেক চিকিৎসকদের ব্যর্থতার দায় নবজাতক

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) থেকে এক নবজাতককে মৃত ঘোষণা পর দাফনের সময়ে ওই শিশু নড়েচড়ে উঠার ঘটনায় হাসপাতালটির চিকিৎসকদের ব্যর্থতা। তবে চিকিৎসকসহ সবার চেষ্টায় কোনো ঘাটতি ছিল না বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন।

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে ঢামেক সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, শাহিনুর বেগম নামে ওই রোগীকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখনই তার কনডিশন ভালো ছিল না। ধীরে ধীরে তা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। এরপর চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রসবের চেষ্টা চালায়। শিশুটি ২৬ সপ্তাহের অপরিণত বয়সে ভূমিষ্ঠ হয়। সাধারণ মায়ের গর্ভে ২৮ সপ্তাহ পার হলে শিশু বেঁচে থাকার মত পরিপূর্ণ বয়স পায়। তবে এই শিশুটি স্বাভাবিক অবস্থায় জীবিত থাকার আগের বয়সেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভূমিষ্ঠ হবার পর চিকিৎসক, নার্স নিয়ম অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে নবজাতকটির সাইন অব লাইফ পায়নি। ঘণ্টা খানেক অবজারভেশনেও রাখা হয় নবজাতকটিকে। এরপরই মৃত ঘোষণা করে স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়। এরপরও ৪/৫ ঘণ্টা নবজাতকটি তাদের কাছেই ছিল। পরে দাফনের জন্য নিয়ে গেলে সেখানে নড়েচড়ে উঠলে আবারো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বিষয়টি জানার পর দ্রুত এনআইসিইউ ম্যানেজ করে সেখানে রাখা হয় তাকে।

পরিচালক বলেন, ঘটনার পরপরই বিষয়টি তদন্তের জন্য ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই কমিটিই আজ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন ও কিছু সুপারিশ করেছেন। তদন্তে উঠে এসেছে জন্মের পর নবজাতকটির কোনো সাইন অব লাইফ ছিল না। এটি একটি রেয়ার (বিরল) ঘটনা। তবে চিকিৎসকদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। মা ও মেয়ে দু’জনকেই বাঁচানোর চেষ্টা ছিল তাদের। দুর্ভাগ্যবশত এমনটি হয়েছে। তবে এখানে চিকিৎসকদেরও ব্যর্থতা রয়েছে। যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আদালতে রিটও হয়েছে। সেখান থেকে আরও যদি তদন্ত করার বিষয়ে নির্দেশ আসে তাহলে সেটিও করা হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, বিশ্বে অনেক দেশেই এমন ঘটনা হয়েছে। এটি একটি ইনম্যাচিউড বেবি ছিল। এমন ঘটনা অনেকক্ষেত্রে ইনম্যাচিউড বেবি, সাপে কাটা রোগী, বিদ্যুৎপৃষ্টের রোগীর ক্ষেত্রেও এই ধরনের ঘটনা ঘটে। যারা পরে অনেক সময় উন্নতি করে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অনেকগুলি প্যারামিটার আছে যেগুলো দিয়ে আমরা বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হবার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি, তার সবই করা হয়েছিল। তবুও তারা নবজাতকটির কোনো সাইন অব লাইফ পায়নি। ওই সময়ে যে চিকিৎসক ও নার্সরা কাজ করেছে তারা হয়তো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। তারা আরও কিছু চেষ্টা করতে পারতো, হয়তো তা করেনি বা বুঝতে পারেনি।  

তদন্ত কমিটি ও হাসপাতালটির নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. মনীষা ব্যানার্জী বলেন, শিশুটিকে এখন অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে ও স্যালাইন চলছে। আজ তাকে মুখে খাবার খাওয়ানো শুরু করা হতে পারে। শিশুটি বেঁচে গেলেও মিরাকল হবে। আমরা আশাবাদী। তবে এখনও ইনফেকশনের, চান্স রয়েছে। শিশুটি এখনও সঙ্কটাপন্নই বলা যায়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে আমাদের মনে হয়েছে এটি অনিচ্ছাকৃত ভুলের মধ্যে পড়েছে। তবে আমাদের এখানে ‘নিউনেটাল লিক’ ও ‘নিউনেটাল প্রেশেন্ট মনিটর’ নেই। এগুলো থাকলে এরকম ঘটনা ঘটনার কোনো সুযোগ থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
এজেডএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।