ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

সমস্যা ডান চোখে, চিকিৎসক অপারেশন করলেন বামটি  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
সমস্যা ডান চোখে, চিকিৎসক অপারেশন করলেন বামটি
 

টাঙ্গাইল: সমস্যা ডান চোখে। ওই চোখেরই অপারেশন করার কথা।

অথচ ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করে ফেললেন চিকিৎসক।  

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে পরে বিনা পয়সায় ডান চোখটির অপারেশন করা হয়েছে। এরপরও ওই ভুল চিকিৎসার দায় এড়াতে টেস্ট রিপোর্ট দাতা টেকনিশিয়ানের ভুল বলে দাবি করছেন চিকিৎসক।  

ঘটনাটি জানাজানি হলেও রহস্য উদঘাটনে এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানা যায়, গত মাসে ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের হরিষা গ্রামের সুফিয়া বেগম (৬৫) নামের ওই বৃদ্ধা। এ সময় টেস্টের মাধ্যমে তার ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করা হয়। এ কারণে চিকিৎসক তার চোখ অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেন। নির্ধারিত তারিখ অনুসারে ৬ মার্চ তার অপারেশন হয়। তবে ওইদিন ডান চোখের পরিবর্তে হয় তার বাম চোখের অপারেশন। ভুক্তভোগী রোগী আপত্তি জানালেও ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান। রোগীসহ স্বজনরা ওই ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদ করায় ওই চিকিৎসক অপারেশনটি ভুল নয়, হাসপাতালের ল্যাব টেস্টের রিপোর্টে ভুলবশত বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে বলে জানান। এ কারণেই বাম চোখের অপারেশন করা হয়েছে। এতে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হন। ভুল চিকিৎসার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরে ১৬ মার্চ বিনা পয়সায় ডান চোখের অপারেশন করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগী সুফিয়া বেগম (৬৫) বলেন, আমার ডান চোখে সমস্যা ছিল। কিন্তু ডাক্তার আমার বাম চোখের অপারেশন করেছেন।
রোগীর ছেলে জজ মিয়া বলেন, আমি আমার আম্মাকে নিয়ে ৬ মার্চ ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে যাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে ডান চোখে ব্লক আছে ও অপারেশন করতে হবে বলে জানান। আম্মার অপারেশন করার অনুমতি দেই আমি। অপারেশন শেষে দেখি আমার আম্মার বাম চোখে অপারেশন করা হয়েছে। বিষয়টি চিকিৎসককে জানালে তিনি বলেন, পরীক্ষায় আপনার আম্মার বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে। এটি কেন হলো এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

এর ১০ দিন পর আবার হাসপাতালে আম্মার চোখের সেলাই কাটতে যাই। ওইদিন চিকিৎসক আবার আমার আম্মার ডান চোখের অপারেশন করতে হবে বলে জানান। এ সময় আমি আপনারা ভুল অপারেশন করেন বলে আপত্তি জানাই। এরপরও চিকিৎসক বিনা পয়সায় আমার আম্মার ডান চোখের অপারেশনটি করে দেন।  

হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাদিয়া বলেন, টেস্ট রিপোর্টে ডান চোখেই ব্লক দেখানো হয়েছে। এরপরও চিকিৎসক বাম চোখ অপারেশন করেছেন। এখন তার ভুল ধামাচাপা দিতে আমার ও রিপোর্টের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান বলেন, আমি রোগীর ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করি এবং অপারেশন করতে বলি। তবে ল্যাব টেকনিশিয়ান ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখে ব্লক দেখিয়ে রিপোর্ট করেন। এ কারণে আমি ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করে ফেলি। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করেছে। পরে ১৬ মার্চ আমার তত্ত্বাবধানেই ওই রোগীর ডান চোখের অপারেশনটি বিনা পয়সায় করে দেওয়া হয়েছে।  

এদিকে, ভুল চিকিৎসার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত কমিটি করেনি বলেও জানান তিনি।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছিল। পরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রোগীর ডান চোখটির অপারেশন করে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কি কারণে আর কেন এমন ভুল হয়েছে, সেটি উদঘাটনে এখনও কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. শাহবুদ্দিন খান বাংলানিউজকে জানান, অতিদ্রুতই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।