ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

করোনারোগীদের নিয়েই ঈদ ডিএনসিসি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২১
করোনারোগীদের নিয়েই ঈদ ডিএনসিসি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের

ঢাকা: মানবসেবায় নিয়োজিত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ঈদের সময়েও কাজ করে যাচ্ছেন ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত হওয়ায় সুযোগ নেই পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কিংবা অন্য কোনো মানুষের সান্নিধ্যে আসার।

এমনই অবস্থায় একরকম করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে ঈদ হচ্ছে এই হাসপাতালসহ সব করোনা হাসপাতাল ও ইউনিটে দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীদের।

শুক্রবার (১৪ মে) বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উদযাপন করছেন পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই দিনটিই মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। স্বভাবতই দিনটিকে প্রিয়জনদের সঙ্গে উদযাপন করার জন্য মুখিয়ে থাকেন সবাই।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সাল থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজধানীর মহাখালীতে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মার্কেটটিতে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।  

দেশের সর্ববৃহৎ এই কোভিড হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত আছেন পাঁচ শতাধিক চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং আনসার সদস্যরা। বিভিন্ন শিফটে পালা করে ডিউটি করছেন তারা।

হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে ২৪৫ জন চিকিৎসক এবং ৩০০ জন নার্স কর্তব্যরত আছেন। এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা রয়েছেন। এখানে দায়িত্বরতদের মধ্যে ১৫০ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বেশিরভাগই সেনাবাহিনীর। তাদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্সসহ সবাই আছেন। ঈদের মধ্যেও তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এখন একটু রোগী কম। তাই রোগী অনুযায়ী পালাক্রমে ডিউটি করছেন তারা।

শুক্রবার সকালে হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলার ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি বেডে করোনা আক্রান্ত রোগী দেখা যায়। তাদের চিকিৎসায় চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও ছিলেন। হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে দেখা যায় আনসার সদস্যদেরও।

হাসপাতালে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট নুসরাত জাহান টুম্পা মনি বলেন, করোনার শুরু থেকেই অর্থ্যাৎ গতবছর থেকেই আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অ্যাটাচমেন্টে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করে আসছি। মাঝে করোনা পরিস্থিতি একটু উন্নতির দিকে ছিল, তবে গত জানুয়ারি থেকে রোগী আবার বেড়ে যাওয়ায় তখন থেকেই এই হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আজ ঈদের দিনেও অফিস করছি। পরিবার বা বাসার কারো সঙ্গে দেখা করা ছাড়াই কাজ করছি। পরিবার ছাড়া ঈদ করছি এটা কষ্টের, তবে আমাদের তত্ত্বাবধানে যদি সাধারণ মানুষ উপকৃত হয় সেটা ভেবে ভালো লাগছে।  

লেফটেন্যান্ট নুসরাত আরও বলেন, আমরা কিন্তু পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্যে আসতে পারি না। যেহেতু আমরা করোনা ইউনিটে কাজ করি আমাদের কিন্তু সবার থেকে আলাদা থাকতে হয়। আমরা যখন অফিসার্স মেসে ফিরে যাই তখনও আলাদা থাকি। দেখা যায়, অন্য সহকর্মীদের থেকেও দূরত্ব বজায় রেখে থাকি।  

‘ঈদের মতো সময়ে পরিবারের সান্নিধ্যে আসতে না পারাটা আসলেই খারাপ লাগে। তবে সময়টা যেহেতু চ্যালেঞ্জিং, কোভিড রোগীদের নিয়ে কাজ করছি তাই প্রতি মুহূর্তেই নিজেদেরই আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। কোভিড রোগীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমাদের সবারই করোনা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। ’

এদিকে এই হাসপাতালেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের করোনায় আক্রান্ত দুই জন রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির। তিনি বলেন, ভারত থেকে আসা দু’জনের মধ্যে আমরা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের করোনা ভাইরাস পেয়েছি। নির্দেশনা মোতাবেক তাদের টেস্ট হাসপাতালে (বক্ষব্যাধি হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে। ভারত থেকে যারা আসছেন তাদের আমরা কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২১
এসএইচএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।