ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শেবামেকে শিক্ষক সংকট প্রকট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২১
শেবামেকে শিক্ষক সংকট প্রকট

বরিশাল: দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে অবদান রাখা বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে (শেবামেক) শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।  

দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য পড়ে থাকলেও তা পূরণের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

আর এ কারণেই লেখাপড়ায় মারাত্মকভাবে বিঘ্নতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

কলেজের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, শেবামেকে ২শ ২৩ পদের বিপরীতে ৯৮ জন কর্মরত রয়েছেন। এরই মধ্যে ২৬ জন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হিসেবে যুক্ত ছিলেন।  তাদের এবং একজনকে প্রেষণে যুক্ত করা হয় এখানে। তারপরও ১শ ২৫টি পদে কোনো শিক্ষক নেই। ফলে এই কলেজে লেখাপড়া করা চিকিৎসকদের জানা-শোনার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে ৩৬ অধ্যাপক পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন একজন। মন্ত্রণালয়ে ওএসডি থাকা দুইজন অধ্যাপককে এখানে নিয়োগ দেওয়ার ফলে মোট সংখ্যাটা এখন তিন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩৩ জন। ৫০ জন সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন।

মন্ত্রণালয়ে ওএসডি থাকা ছয়জনকে এখানে সংযুক্ত করা হয়। শূন্য ৩৭টি সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে কেউ নেই। ৮০ জন সহকারী অধ্যাপকের পদে ৪৬ জন কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হিসেবে যুক্ত। তারপরেও শূন্য পদের সংখ্যা ৩৪।  

৪৪টি প্রভাষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৮ জন। এরমধ্যে একজন প্রেষণে যুক্ত। ছয়জন মেডিক্যাল কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কর্মরত দুইজন। আর বায়োকেমিস্ট্রির একটি পদের বিপরীতে কেউ কর্মরত নেই।

শেবামেক থেকে জানানো হয়েছে, ভাইরোলজি, শিশু হেমাটলজি ও অনকোলজি, ক্লিনিক্যাল নিউরো সার্জারি, অর্থোপ্লাস্ট, অর্থোপেডিক ও ট্রমাটোলজি, স্পাইন সার্জারি, জেনারেল রেডিওলজি, নিউরো রেডিওলজি, রক্ত পারিসঞ্চালন, নিউরো সার্জারি এবং রিউমাটোলজি বিভাগগুলোতে কোন শিক্ষক নেই।

এছাড়া ফিজিওলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রো বায়োলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন, নেফ্রোলজি, প্যাথলজি, নিউওরো মেডিসিন, অর্থোপেডিক, নাক-কান-গলা, রেডিও থেরাপি, ইউরোলজি, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিক, নিউনোটলজি ও রিউমাটোলজি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের পদগুলোও শূন্য।  

পাশাপাশি রেসপিরেটরি মেডিসিন, হেপাটোলজি, রেডিওথেরাপি, এনেস্থেসিওলজি, রেডিওলজি ও ইমেজিং, চক্ষু, স্পোর্টস মেডিসিন ও অর্থোস্কপি, অর্থোপেডিক, সার্জারি, ফার্মাকোলজি ও বায়োকেমিস্ট্রিসহ আরো কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদগুলো দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে।  

কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন মেডিক্যাল কর্মকর্তা পুরো বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এখানে অনুমোদিত পদ রয়েছে সাতটি।  

মাইক্রোবায়োলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগেও একজন করে সহকারী অধ্যাপক থাকলেও মেডিসিন বিভাগের তিনজন অধ্যাপকের পদই শূন্য। আর সহযোগী অধ্যাপকের পাঁচটি পদে রয়েছেন একজন এবং সহকারী অধ্যাপকেরও তিনটি পদ শূন্য।  

শিশু বিভাগের তিনটি সহযোগী অধ্যাপকের পদেও কোনো জনবল নেই।  

নেফ্রোলজি বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের তিনটি পদের বিপরীতে একজন সহকারী অধ্যাপক কর্মরত রয়েছেন। সাইক্রেটিক বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক থাকলেও গাইনি বিভাগের দুটি অধ্যাপক পদ শূন্য। আর তিনটি সহযোগী অধ্যাপকের পদে রয়েছেন একজন এবং সহকারী অধ্যাপকের পাঁচটি পদে কর্মরত তিনজন।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, প্রতি মাসেই মেডিক্যাল কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। তাই মন্ত্রণালয় শিক্ষক সংকটের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।

শেবামেকের অধ্যক্ষ বলেন, এখন যে সংকটের চিত্র ফুটে উঠেছে তা দুই-এক বছরে হয়নি। ৫/৭ বছর আগে থেকেই শিক্ষক সংকটের শুরু হয়। আর করোনার ১৯ মাস তো ক্লাসই বন্ধ ছিল, সে সময়েও অনেকে অবসরে গেছেন।
 
তিনি বলেন, এখন এ কলেজে শুধু শিক্ষক নন কর্মচারীর সংকটও রয়েছে। কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, আর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলেও আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক সংকট দূর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২১
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।