ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ওমিক্রন ঠেকাতে আসছে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২২
ওমিক্রন ঠেকাতে আসছে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ 

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে স্বাস্থ্যবিধি পালনের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কমানো, টিকা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় টিকা কার্ড দেখিয়ে খাবার পরিবেশন করার মতো পদক্ষেপ আসছে।

  

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসব বিধিনিষেধের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

করোনার নতুন ধরন নিয়ে প্রস্তুতি বিষয়ে সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব জানিয়েছেন।

বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আর ডিসি-এসপিসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওমিক্রন নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো এখনই সব বলে দেওয়া যাবে না, কারণ সিদ্ধান্তগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সার্কুলেট করা হবে।

তিনি বলেন, ওমিক্রন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এ বিষয়ে সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনার মধ্যে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ছিলেন। আট বিভাগের কমিশনার, ডিসি-এসপিরা ছিলেন, অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা ছিল, স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালকরা ছিলেন।  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে, আমাদের অক্সিজেন আছে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০টি স্থাপন করা হয়েছে, টিকা কার্যক্রম চলমান আছে, ২০ হাজার বেড সবগুলো রেখে দিয়েছি। এখন ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত, তারা জানে কীভাবে করোনার চিকিৎসা করতে হয়। তারা অনেক অভিজ্ঞ। দেশবাসীও এ বিষয়টি জানে।

জাহিদ মালেক বলেন, কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো যে, করোনা বেড়ে যাচ্ছে। আজকে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। যেটা ১ এর নিচে নেমে গিয়েছিল। মৃত্যু হার যদিও এখনো কম আছে, কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই।

মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারও সেই লকডাউনের কথা চলে আসবে, আবারও স্কুল-কলেজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হবে। আবারও পরিবহনের চিন্তা-ভাবনা থাকবে কীভাবে পরিবহনটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কীভাবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য…, সবকিছুর ওপরে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেটা আমরা চাই না।

পুলিশ পাহারায় কোয়ারেন্টিন
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার আলোচনা হয়েছে। যেমন- আমাদের ল্যান্ড পোর্ট, এয়ার পোর্ট, সি পোর্টগুলোতে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো এবং আরও মজবুত করা। যেটা আমরা অলরেডি করছি, ওখানে এন্টিজেন টেস্ট করছি, পিসিআর টেস্টও করছি। কোয়ারেন্টিনে আরও বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ সংক্রমিত থাকলে যথাযথভাবে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থায় রাখা হোক। যেটা পুলিশ প্রহরায় যাতে কোয়ারেন্টিন থেকে বেরিয়ে না যায়। ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টিন আমরা চাচ্ছি না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিমানে যারা ওঠেন, তাদের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উঠতে হয়। তাদের ভ্যাকসিনেশন থাকতে হয়, আরটিপিসিআর ও অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হয়। মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারদের ৬-৭ ঘণ্টা আগে আসতে হয়। কাজেই এ বিষয়ে আমরা নতুন সিদ্ধান্তের কথা বলিনি। বরং জোরদার করা হয়েছে, যাতে তারা মাস্ক পরিধান করে আসা-যাওয়া করে এবং টেস্টের বিষয়টি নিশ্চিদ্র করা হয় যাতে ভুলভ্রান্তি না থাকে।  

সব অনুষ্ঠান সীমিত হচ্ছে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যত অনুষ্ঠান আছে- সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যাতে সংখ্যা সীমিত করা যায়, সে বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং নীতিগতভাবেই কিছুটা পজিটিভ আলোচনা হয়েছে যে, এটা করা হবে।

গণপরিবহনে আসন কমছে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবহন সেক্টরে বলা হচ্ছে, যে সিট ক্যাপাসিটি আছে সেই ক্যাপাসিটি কমিয়ে যাতে চালানো হয়, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একটা সিদ্ধান্ত আশা করি আমরা পাবো।

মাস্ক না পরলে জরিমানা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো ক্ষেত্রেই দোকান-পাটে যেই যাবে, তাকে মাস্ক পরে যেতে হবে। বাসে উঠলে মাস্ক পরতে হবে, ট্রেনে উঠলে মাস্ক পরতে হবে, মসজিদে গেলে মাস্ক পরতে হবে। অর্থাৎ সব জায়গায় মাস্ক পরতেই হবে। না পরলে তাকে জরিমানা করা হবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

টিকা কার্ড ছাড়া রেস্টেুরেন্টে খাবার নয়
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তাগিদ দেওয়া হয়েছে যাতে টিকা গ্রহণ করে। টিকা যারা নিয়েছে তারা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে, অফিসে যেতে পারবে, বিভিন্ন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে মাস্ক পরা অবস্থায়। কিন্তু টিকা যদি না নিয়ে থাকে তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে পারবে না। কারণ দেখাতে হবে টিকার সার্টিফিকেট যে আমি টিকা নিয়েছি। তবেই সেই রেস্টুরেন্ট তাকে এন্টারটেইন করবে, যদি কেউ করে তাহলে সেই রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে। ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটা সার্কুলার জারি করা হবে।

লকডাউনের পরিস্থিতি এখনো হয়নি
জাহিদ মালেক বলেন, লকডাউনের সুপারিশ আমরা এখনো করিনি এবং লকডাউনের পরিস্থিতি এখনো হয়নি। লকডাউনের ওই পর্যায়ে না যেতে হয় সেজন্যই তো আজকের এই প্রস্তুতি সভা। যা যা পদক্ষেপ নেবার সেগুলো নিই, তারপর দেখা যাক কী দাঁড়ায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই মুহূর্তে লকডাউনের কথা ভাবছি না। এখন আমরা জোর দেব প্রতিরোধের বিষয়ে। যে সমস্ত কার্যকলা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ওমিক্রন বা করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য, সেগুলোর উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে, টিকায় জোর
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকবে কিন্তু বলা হয়েছে টিকাটা যেন তারা গ্রহণ করে। যারা ছাত্র-ছাত্রী আছেন, তাদের টিকা নেওয়ার বিষয়টি ঢিলেঢালা ভাব আছে। আমরা চাচ্ছি এটাকে আরও জোরদার করা হোক, আমরা সহযোগিতা করব। আমাদের পক্ষে যতটুকু করা দরকার করে আসছি। আমরা আহ্বান করছি যাতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের তাড়াতাড়ি টিকা দেওয়া হয় এবং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২১
এমআইএইচ/জেএইচটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।