ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

গোদ রোগ নির্মূলে আশার আলো ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
গোদ রোগ নির্মূলে আশার আলো ফাইলেরিয়া হাসপাতাল ফাইলেরিয়া হাসপাতাল। ছবি: বাংলানিউজ

নীলফামারী: উত্তরাঞ্চল থেকে গোদ রোগ নির্মূলে আশার আলো দেখাচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল। প্রতিদিনই রোগী আসছে দূর-দূরান্ত থেকে।

ফলে নতুনভাবে পরিচালিত এ হাসপাতালটি গোদ রোগীদের কাছে আশির্বাদ হয়ে উঠেছে।  

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর সারাদেশে দুই লাখ রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, উত্তর জনপদের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল ফাইলেরিয়া রোগ প্রবণ এলাকা। কয়েক প্রজাতির মশার কামড়ে রোগটির উৎপত্তি। এটি সংক্রামকও। এই পরজীবীতে আক্রান্ত হলে রোগীর হাত-পাসহ স্পর্শকাতর স্থানগুলো অস্বাভাবিক ফুলে যায়। অতীতে এ রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। পরে ২০০২ সালে ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সৈয়দপুর শহরের উপকণ্ঠে কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ নামক স্থানে ওই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে।  

স্থানীয় কবির উদ্দিন সর্দার হাসপাতালটি নির্মাণে জমি দিয়ে এগিয়ে আসেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে হাসপাতালটি।

জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় হাসপাতালের জন্য সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকে এটিকে বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম শুরু হলে জাপান ও অন্যান্য দেশের গবেষণা কর্মীরা এখানে গবেষণার জন্য আসেন। শুরু হয় হাসপাতালে আধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষে (ওটি) হাইড্রোসেল, হার্নিয়া রোগের চিকিৎসা। পাশাপাশি চলতে থাকে গোদ রোগের জন্য গণওষুধ সেবন কার্যক্রম।

সারাদেশ থেকে প্রচুর রোগী এসে ভিড় জমান সৈয়দপুরে ফাইলেরিয়া হাসপাতালে। একই সূত্র জানায়, ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট সৃষ্টি হয়। এর আগেই মুখ ফিরিয়ে নেন দাতা সংস্থাগুলো। ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। অবশ্য সরকারিভাবে সংকট উত্তরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

এদিকে আইএসিআইবি ২০১৯ সালে এক চুক্তিপত্রের মাধ্যমে হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ প্যারামেডিক্যাল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনকে (বিপিডিএ)। বর্তমানে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া ও জেনারেল হাসপাতালটি।  

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, কারো গোদ রোগের কারণে বিয়ে হচ্ছিল না। কারো সমাজে চলাফেরায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। এখানকার চিকিৎসায় তারা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।  

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মোরসালিন খান শুভ জানান, হাসপাতালটিতে নয়জন চিকিৎসক রয়েছেন। এর কর্মী সংখ্যা ৭০ জন। বর্তমানে হার্নিয়াসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা সাশ্রয়ী ফি গ্রহণ করে থাকি। এছাড়াও গরিব রোগীদের দেওয়া হয় বিনামূল্যে চিকিৎসা। আমাদের রোগ নির্ণয় ল্যাবরেটরি ও অপারেশন থিয়েটার অত্যন্ত আধুনিক। সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও রয়েছে। ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির বহি:র্বিভাগে দৈনিক কমপক্ষে ৩০০ রোগীর সেবা দেওয়া হয়। আমরা ফাইলেরিয়া নির্মূলে অঙ্গীকারবদ্ধ।

হাসপাতালের পরিচালক ফয়েজ আহমেদ জানান, সৈয়দপুরে ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালটি একটি ব্যতিক্রম সেবা প্রতিষ্ঠান। ভবিষ্যতে হাসপাতালটিকে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।